চট্টগ্রাম, ২১ মে, ২০২২:
অনন্য মাত্রায় দেশের কীর্তিমান সন্তান বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামকে স্মরণ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। যে দেশ, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন বাংলাদেশের সন্তান, স্বপ্নমগ্ন, আত্মভোলা মানুষ জামাল নজরুল ইসলাম। কীর্তিমান বিজ্ঞানী, গবেষক ও গণিতবিদ অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলাম স্মরণে দেশের ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের ৫২৪ জন তরুণ গবেষকের অংশগ্রহণে দেশে প্রথমবারের মত জাতীয় তরুণ গবেষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেই সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে বিজ্ঞানী ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বোর্ড মেম্বার গবেষক ড. সেঁজুতি সাহা বলেছেন, জামাল নজরুল ইসলাম তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। তিনি চাইলে বিশ্বের যেকোনো জায়গাতেই থাকতে পারতেন কিন্তু তিনি তার দেশকে ভালবেসে বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি বাংলাদেশে বসেই তার গবেষণাকর্ম চালিয়ে গিয়েছিলেন। সবসময় নিজ দেশের জন্য কাজ করেছিলেন। উনার ধ্যানজ্ঞানে সবসময়ই ছিল দেশের জন্য কিছু করা।
সত্যি জামাল নজরুল ইসলাম্েমেন একজন দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী।
যার স্মরণে গতকাল শনিবার ‘কল্পনা ও উদ্ভাবনের পথে আগামী প্রজন্ম’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল দশটায় শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) উদ্যোগে এ সম্মেলন আয়োজিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ও সিইউআরএইচএস এর পরিচালক অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার।
অধ্যাপক ড. শিরিণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গবেষণা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ সমুদ্রবিজ্ঞান খাতে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকরা আমাদের স্বপ্ন দেখায়, আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে গবেষণায় শীর্ষ ২০-এ থাকব। গবেষকরা এগিয়ে চলুক, বাংলাদেশ এগিয়ে চলুক সমৃদ্ধির পথে-এই কামনা।
পদার্থবিজ্ঞান ও প্রকৌশল, জীববিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান কৃষি ও উদ্ভিদ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান ও মানববিদ্যা, বাণিজ্য এই ছয় শাখায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ গবেষকেরা অংশ নেন।
আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে তরুণদের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম উপস্থাপন, গবেষণার পোস্টার প্রদর্শনী, বাংলা ভাষায় অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত থ্রি মিনিট থিসিস, জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী তরুণ গবেষকদের সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, সঠিক গবেষণার মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। সঠিক গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে একটা দেশের সার্বিক উন্নতি সম্ভব।
অনুষ্ঠানে স্পটলাইট স্পিকার হিসেবে ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আইনুন নিশাত।
জামাল নজরুল ইসলাম স্মারক বক্তৃতায় মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আরশাদ মোমেন। তরুণদের বিজ্ঞান গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ পর্বে মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. নাসিম হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর এবং ড. জামাল নজরুল ইসলামের কন্যা সাদাফ সিদ্দিকি ও নারগিস ইসলাম। বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. অলক পাল, এবং সম্মেলনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. রবিউল হোসাইন ভূঁইয়া।
এছাড়াও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম রিসার্চ সেন্টার ফর ম্যাথমেটিকাল এন্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স এবং চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) জামাল নজরুল ইসলাম স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শেুধু ওই কীর্তিমান বিজ্ঞানীকে সম্মান জানাননি একই সাথে এদেশ ও প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞান চর্চারা নতুন একটি বীজও বপন করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বাগ্রে। যাতে জামাল নজরুল ইসলামের মনন ও দেশপ্রেম তারা ধারণ করতে পারে।
Discussion about this post