চট্টগ্রাম, ১৩ জুন, ২০২২:
পদ্মা সেতু নিয়ে যখন দেশজুড়ে বেশ হৈচৈ শুরু হল ঠিক তখনই ঘটল চট্টগ্রামের সীতাকু-ের বিএম ডিপোর অগ্নিকা- ও বিস্ফোরণ। এর আগে কেবল শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণ গণনা। বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন পোর্টালগুলো ডিজিটাল ক্ষণ গণনা শুরু করেছিল। কিন্তু বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা- ‘হরিষে বিষাদ’ সৃষ্টি করেছে। দেশের এমন আনন্দঘন সময়ে এই অগ্নিকা-ের ঘটনায় সারাদেশ যেন শোকে কাতর হয়ে উঠে।
এই পর্যন্ত এই অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে প্রায় ৪৭ জন্য মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ১২ জন কর্মী এই ঘটনায় অগ্নি দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে আর ঘটেনি। আর যেসব শ্রমিক কর্মচারি নিহত হয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ সকলের বিয়োগ ব্যথায় দেশজুড়ে হাহাকার উঠে। স্তব্ধ হয়ে যায় দেশের মানুষ।
বিএম ডিপোর এই অগ্নিকা-ের কারণ এখনো জানা যায়নি। অন্যদিকে বিএম ডিপোর হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির বাইরেও সেখানে যে সব রপ্তানি পণ্য ছিল সেসব ব্যবসায়িদের কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এখনও খবরে জানা যাচ্ছে, চিকিৎসাধীন দগ্ধ শ্রমিক ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মিদের কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে গতকাল রবিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন অন্তর্ঘাতের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি মুন্সিগঞ্জে গিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অবস্থা পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্ঘাতের শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্ঘাত হতেও পারে। সেটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবরও আছে।
বিএম ডিপোর অগ্নিকা-ের পর থেকেই দেশে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ট্রেনে, ফেরিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
তবে সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে নাশকতা বা ধ্বংসাত্মক কিছু যাতে ঘটাতে না পারে, জনগণের দৃষ্টি যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেজন্য সতর্ক আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বৈঠক হয়েছে সেতু ভবনেও।
এছাড়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অন্য একটি সভা আজ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে সারা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।
মূলত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে বলে সূত্রগুলো জানাচ্ছে। যাতে সেতুটির উদ্বোধনী অনুষ্টানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা যায়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উৎসাহ-উদ্দিপনায় প্রতিবন্ধকতা ঘটানো যায়।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে সামনে রেখে ২৫ জুনের এসএসসি পরীক্ষা ২৪ জুন অনুষ্ঠিত হবে বলে সংবাদে জানা গেছে।
তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক আছে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গেছে। আর সেতু উদ্বোধনের পরদিন থেকে অর্থাৎ ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই সেতু।
যে কারণে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সকল কর্মসূচী ঠিকঠাকমত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। জমকালো অনুষ্ঠানের যে সিদ্ধান্ত তা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে থেমে নেই উৎসবের প্রস্তুতি।
এরমধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এখন চলছে সড়ক সংকেত বসানো, সেতুর রেলিং সংযোগ, গ্যাস পাইপলাইন, বিদ্যুতের সাব স্টেশন স্থাপনের কাজ। প্রস্তুত করা হয়েছে টোল প্লাজাও। ৪১৫ টি বৈদ্যুতিক বাতি প্রজ্জ্বালনে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হচ্ছে। চলছে রাস্তা মেরামতের কাজ নানা টুকিটাকি কাজ।
সবকিছু মিলে ২৫ জুনের জন্য সাজ সাজ রব। মাওয়া প্রান্তে চলছে সমাবেশের প্রস্তুতি। সাথে আনন্দের রোশনাই ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। উৎসবের সেই স্ফূরণ পদ্মার দুই পাড় জুড়ে। দুই পাড়ের মানুষের চোখে সেই বহু আকাক্সক্ষার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দের ক্ষণের জন্য অপেক্ষা।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দ যেটুকু ম্লান হয়ে পড়েছিল বিএম ডিপোর অগ্নি দুর্ঘটনায়। সেটুকু পূরণ হবে এই কয়েকদিনে। দ্বিগুণ উৎসাহে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। উদ্বোধন করবেন -বঙ্গবন্ধুৃ কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শত ষড়যন্ত্রও যাকে পিছু হঠাতে পারেনি পদ্মা সেতু নির্মাণে।