চট্টগ্রাম, ১৪ জুন, ২০২২:
‘মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য’ – এমন মানবিক বোধ থেকে মানুষ মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। নানা ঘনঘটায় মানবিক মানুষরাই শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর আশা ও স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে।
তেমনই একজন মানুষ নাজমুল ইসলাম। কারো নাম, পরিচয়, ঠিকানা না জেনেও বছরের পর বছর ধরে রক্ত দান করে আসছেন। সেটা প্রায় ৩২ বছর। ঊনিশ-বিশ বছর বয়স থেকে তার রক্ত দেওয়া শুরু। এখনো তিনি রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন। এখন যদি তার বয়স ৫০/৫২ বছর হয় তাহলে তার কথা মতো ‘মানুষ ৬০ বছর রক্ত দিতে পারে। তার মানে- নাজমুল আরো ৮/১০ বছর রক্ত দিতে প্রস্তুত। এই ৩০/৩২ বছরে তিনি বছরে তিনবার কর ১০০ বার মানে ১০০ ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন। যা একটা রেকর্ড। এর মধ্যে ৯৪ ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সন্ধানীকে। আর ছয় ব্যাগ দিয়েছেন রক্ত সংগ্রহকারী অন্যান্য সংগঠনকে।
আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে তাকে সম্মানিত করেছে- সন্ধানী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ইউনিট। বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে আজ দুপুরে সন্ধানী-চমেক ইউনিট আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে তিনি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমাইল খানের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
রক্ত দিতে কেন এত উৎসাহ তা জানতে চাইলে নাজমুল পিসিএলকে বলেন, রক্ত তো এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়। তো নষ্ট হওয়ার চেয়ে মানুষের জন্য দিয়ে দেওয়া ভালো।
নাজমুলের এই শ্রেয়োবোধের কথায় কোনো মানবতার জন্য বিশেষ পোশাকী হাহুতাশ নেই। নেই কোনো ধর্মীয় নির্দেশনার কথাও। মানুষের প্রয়োজনে তিনি যে শ্রেষ্ঠত্ব ধারণ করেন তা আমাদের চর্চিত সমাজবোধ থেকে আলাদা।
এত ঘন ঘন রক্ত দেওয়ায় তার শারীরিক কোনো সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি অতি স্বাভাবিক ভাবে বলেন, ক্ষতির কি আছে। ষাট বছর পর্যন্ত রক্ত দেওয়া যায়।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ বাড়ি নাজমুলের। তবে বাড়িতে আর যাওয়া আসা হয়না। চট্টগ্রাম নগরের খুলশিতে ঘরবাড়ি করে আবাস পেতেছেন সপরিবারে। তার পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রিন্টিং ব্যবসা ছিল। সেটা এখন নাই। তবে অন্য ব্যবসায় যুক্ত হয়ে সংসার সামলাচ্ছেন।
শুধু নাজমুল নন নাজমুলের পরবারের সদস্যরাও তার মতই মানুষের জন্য রক্ত দিতে শিখেছে। বিনা দ্বিধায় তারাও রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন।
রক্তের এ পজিটিভ গ্রুপের নাজমুলের জীবনবোধ মানব সমাজের জন্য অনুকরণীয় হোক। যেমন তার পরিবারের সদস্যরা মুমূর্ষু মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্ত দিতে পিছপা হননা।