চট্টগ্রাম, ২১ জুন, ২০২২:
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেছেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকাটি হালনাগাদ করার চেষ্টা করছি। আশা রাখছি আগামী মাসখানেকের মধ্যে পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে যারা ভূমিহীন আছেন তাদের তালিকা করে সরকারি পদ্ধতিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় সভায় বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিগণ নিজেদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
আশরাফ উদ্দিন আরও বলেন, আমাদের ফান্ডে প্রায় ৯৩ লাখ টাকা আছে। সঠিক নীতিমালা না থাকায় আমরা তা ব্যয় করতে পারছি না। কিন্তু গত সভায় ‘পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পাহাড়ি অঞ্চলে এখন কোনো দুর্ঘটনা হলে মানুষকে উদ্ধার করা এবং তাদের সহযোগিতায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। যেহেতু ফান্ডটি মানুষের অনুদানের টাকায়, তাই চট্টগ্রামের দানশীল মানুষদের কাছ থেকে ফান্ড নিয়ে এটি আরও সমৃদ্ধ করা হবে। ইতোপূর্বে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য ১৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও খরচ করা হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গ্যাস ও ওয়াসার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন পাহাড়ে তাদের কোনো সংযোগ নেই। তবে বিদ্যুতের কিছু সংযোগ রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে বিদ্যুতের সংযোগগুলো অপসারণ করা যায়।
সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে প্রায় সবক’টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি। কিন্তু পরে তারা আবারও সেখানে বসতি স্থাপন করে। যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ চিরতরে বিচ্ছিন্ন করতে পারি তাহলে সেখানে বসবাসের সুযোগ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া একটু খারাপ হলেই আমরা পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসি। কিন্তু তারা সেখান থেকেও পালিয়ে যায়। তাই যে স্থাপনাগুলো আমরা উচ্ছেদ করেছি সেগুলো রক্ষা করতে হবে। আমাদের পাহাড়েও দুটি ডিপ টিউবওয়েল আছে সেগুলোর বিষয়েও ওয়াসা এখনো কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। যেখানে উচ্ছেদ করা হবে সেখানেই কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। জেলা প্রশাসন সেখানে গাছ লাগাবেন। গত কয়েক দিনে ২০৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব পাহাড় যেসব সংস্থার আওতাধীন তাদেরকেই রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কমিটি সশরীরে গিয়ে ২৮টি পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। পাহাড়ধসে যে চারজন মানুষ মারা গেছেন তাদের রাতেই আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি চলে যায় আর রাতেই দুর্ঘটনা ঘটে ।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম সেনা নিবাসের মেজর ফারুক মেহেদী, বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেঃ কর্ণেল আহমেদ জামিল, সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ, রেলওয়ের সিইও সুজন চৌধুরী, সিএমপি’র ডিসি (পশ্চিম) আব্দুল ওয়ারিশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কবীর আহম্মেদ, রেলওয়ওে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আরমান হোসেন, আনসার পরিচালক আশীষ কুমার দাশ, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব বড়–য়া, পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ রেওয়াজ মিয়া, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী গোফরান উদ্দিন চৌধুরী, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শাহরিয়ার নেওয়াজ, উপ-পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিউটন দাশ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী প্রমূখ। সভায় সরকারের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত কর্মকর্তা ও সেবা সংস্থারর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি