খাল, বিল, নদী-নালার দেশ বাংলাদেশ। এক সময় নদ-নদী, বিল-ঝিল, জল-জলার সাথে সম্পর্ক ছিল না এমন ছেলেমেয়ে কমই ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে আমাদের অনেক আগে। এখনকার ছেলেমেয়েরা যারা দূর দূরান্তে ভ্রমণে যায়, বিশেষ করে সাগর দেখতে যাওয়া -কক্সবাজার কিংবা সেন্টমার্টিনে। এ ধরনের সাগর দেখা ছাড়া ও হাওর অঞ্চলে যারা বেড়াতে যায়, তারাও। যাদের বেশিরভাগের বেড়ে উঠা নগর- মহানগরগুলোতে। হয়ত দেখা যাবে তাদের অনেকেই এর আগে পুকুরও দেখেনি। দেখলেও গ্রামে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগে। তাতে সাঁতার শেখা বা সাঁতার জানা তাদের হয়নি। নদী-খাল দেখেছে পারাপারে। সেখানে যখন তারা উদ্দাম আনন্দ নিয়ে সাগর দেখতে যায় সেক্ষেত্রে – তারা থাকে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের তোড়ের মত। এমন অবস্থায় না বুঝে সাগরের সাথে সখ্যতা দেখাতে গিয়ে ঘটে সলিল সমাধি।
এভাবেই গত বুধবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে বেড়াতে যাওয়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৌফিক মকবুল (২৩) তার তিন বন্ধু সহ গোসল করতে নেমে, তারা সমুদ্রে ভেসে যায়। অন্য দুই বন্ধু রক্ষা পেলেও তৌফিক মকবুল বাঁচতে পারেননি। ভেসে যাওয়া মকবুলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেদিনই।
এরকম ২০১৪ সালে আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে আর তাদের বেশ কয়েকজন সমুদ্রে ভেসে যায়। তাদের ৫ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও অপর দুজন নিখোঁজ ছিল।
তারা ৩৪ জন ভাটার সময় সমুদ্রে গোসল করতে নামে। তখন সাঁতার প্রতিযোগিতা দেয়। আর তাতেই ভাটার টানে চারজন ভেসে যায়। তাদের পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও দুজন মারা যায়। ২০১১ সালেও ক্লোজ আপ ওয়ান তারকা আবিদও একইভাবে সমুদ্রে গোসলে নেমে ভেসে যায়।
সচেতন মানুষের অভিমত তারা তো সাঁতার জানেই না, জানলেও সমুদ্রে উদ্দাম আনন্দে ছোটাছুটি করতে গিয়ে তাদের আর হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন সমুদ্রে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিতে হয়। অন্যদিকে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি আর জোয়ার ভাটার তোড়ে সাঁতার জানা থাকলেও তা কোনো কাজে আসে না। ফলে ঘটছে এসব মর্মান্তিক মৃত্যু। তাও সম্ভাবনাময় এসব তরুণ শিক্ষার্থির মৃত্যু মা-বাবা সহ দেশের অপূরণীয় ক্ষতি। যারা স্বপ্ন নিয়ে সারা জীবন পড়ালেখা চালিয়ে গেছে, কিন্তু সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে এভাবে অসতর্কতায় মৃত্যু, তা মেনে নেয়া কষ্টকর পরিবারের জন্য।
এক্ষেত্রে সমুদ্র ভ্রমণে পরিবার পরিজনের সতর্কতা যেমন জরুরি, তেমনি কক্সবাজারে সৈকতে যারা ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে তাদের আরও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া সাগরে নামার আগে জানতে হবে জোয়ার নাকি ভাটা। ভাটার সময় থাকে লাল পতাকা। যখন সাগরে নামা বিপদজনক। এছাড়া সাগরে থাকে বিপদজনক খাদ বা গুপ্ত খাল। সাঁতার জানা না থাকলে লাইফ জ্যাকেট অবশ্যই প্রয়োজন। আর মাতাল অবস্থায় সাগরের পানিতে নামা আরও বিপদজনক। সেন্টমার্টিনে আছে প্রবাল পাথর। তাতে সাগরে নামলে সেখানে ভিন্ন রকমের বিপদের সম্ভাবনা আছে। এজন্য পেশাদার গাইড ছাড়া সাগরের পানিতে লাফালাফি, দাপাদাপি বিপদজনক।
শুধু তাই নয় কক্সবাজারের সাগরের সর্বত্র নামা যায় না। এজন্য কিছু নির্দিষ্ট এলাকা আছে। এছাড়া সাগরে কোথাও কোথাও গুপ্ত খাল বা খাদ তৈরি হতে পারে।
মূলত সমুদ্র ভ্রমণের পরিপূর্ণ ধারণা না থাকায় সাগরে ডুবে মারা যাবার ঘটনাগুলো ঘটছে। একটি উদ্ধারকারী সংস্থার তথ্যমতে, গত এক দশকে সাগরে গোসল করতে নেমে মারা গেছে শতাধিক ভ্রমণকারী। তাদের অধিকাংশই তরুণ শিক্ষার্থী। যারা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র।