চট্টগ্রাম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের মধ্যে কখনো কখনো বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের পাশাপাশি গোলাও এসে পড়ছে বাংলাদেশ সীমান্তে। এর মধ্যে আজ ১৬ সেপ্টেম্বর
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশি তরুণ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে মিয়ানমারের ছোড়া গোলায় সীমান্তের শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরিত হয়ে কয়েকজন হতাহত হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। ল্যান্ড মাইনের ঘটনায় একটি গরুও মারা গেছে।
এ ঘটনার পর সীমান্তের বাংলাদেশি নাগরিক ও মিয়ানমারের নাগরিক সীমান্তের শূন্যরেখার শরণার্থি ক্যাম্পে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
১৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যানপাড়া সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলার সংলগ্ন ৩০০ মিটার মিয়ানমার অভ্যন্তরে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়।
আহত তরুণ ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যানপাড়া এলাকার অং কিউ থাইং তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে।
স্থানীয় আরিফ উল্লাহ জানান, তুমব্রু হেডম্যানপাড়ার স্থানীয়দের গবাদিপশু ঘাস খেতে খেতে মাঝেমধ্যে সীমান্তের ওপারে চলে যায়। ফলে সেগুলো ফিরিয়ে আনতে মালিকদের সীমান্ত এলাকায় যেতে হয়। আজও অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা গরু চরানোর সময় তার গরু সীমান্তের ওপারে চলে গেলে সেটি ফিরিয়ে আনতে যায়। সেখানে মিয়ানমার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যার বাঁ পায়ের গোড়ালিসহ পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয় তাকে। পরে গুরুতর আহত হওয়ার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর সীমান্তে বিজিবি টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে। টহলরত অবস্থায় বিজিবি জওয়ানেরা জানান, কি কারণে ওই দুই যুবক বিজিবির নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জিরো লাইনে গিয়েছিল তা এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি সীমান্তে এসব মাইন পুঁতে রেখেছে।
আহতের মা ইয়াং মে চাকমা দাবি করেন, শুক্রবার দুপুরে গরু নিয়ে আসতে অংঞাথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা ও আরও কয়েকজন যুবক সীমান্তের কাঁটাতারের কাছাকাছি যায়। সেখানে হঠাৎ মাইন বিস্ফোরণ হয়। এতে গুরুতর আহত হয় তার ছেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মিয়ানমার মাইন পুঁতে রেখেছে। সেই মাইন বিস্ফোরণ হয়ে তার ছেলে আহত হয়েছে। তার ছেলের বাঁ পায়ের নিচের অংশ উড়ে গেছে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম হয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন জানান, সীমান্তের ওপার থেকে গরু আনতে গিয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে তমব্রু হেডম্যানপাড়ার একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরিত হয়ে প্রতি বছর এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি তরুণ আহত হয়েছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস জানিয়েছেন, সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দল আহত তরুণকে উদ্ধার করেছে। আমরা স্থানীয়দের সীমান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করেছি। বিজিবি লোকজনদের সীমান্তের আশেপাশে যেতে দিচ্ছে না। এ ঘটনার পর সীমান্তে বিজিবির টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির মিয়ানমার সীমান্তে সেদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনী ও সীমান্ত রক্ষী বিজিপির মধ্যে লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকটি মর্টারশেল ও গুলি এসে পড়েছে বাংলাদেশের মধ্যে।
Discussion about this post