চট্টগ্রাম, ১১ অক্টোবর, ২০২২:
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানেন না, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। মুক্তিযোদ্ধাদের কত ত্যাগ, অবদান। জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন উৎসর্গ করতে ছুটে গিয়েছিলেন আবু মুছা চৌধুরী। দেখতে হবে সত্যিকার অর্থে কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা তার আন্তর্জাতিক স্কীকৃতি আজো মিলেনি। বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
১১ অক্টোবর বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীর নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের পরিচালিত অভিযানের গুরুত্ব তুলে ধরে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্টে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে ১১ টি জাহাজ উড়িয়ে দেন। এই প্রথম পাকিস্তান বিশ্বের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এরআগে পর্যন্ত তারা মিথ্যাচার করছিল। নৌকমান্ডোদের অভিযানের পর আর বিশ্বের কাছে মিথ্যাচার করতে পারেনি পাকিস্তান।
তিনি আরো বলেন, আবু মুছা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অপারেশন জ্যাকপট, অপারেশন আউটার অ্যাংকর, অপারেশন অ্যাভলুজ ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, নারায়ণগঞ্জের নিকটে জাতিসংঘের পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তরুণ প্রজন্মকে এসব ইতিহাস জানতে হবে।
চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো অনীল বরণ রায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাখাল চন্দ্র বণিক, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবু মোহাম্মদ হাশেম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার মাহফুজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাহিম উদ্দিন আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম শাহ।এছাড়া প্রয়াতের সহধর্মীনি মরিয়ম আক্তার সহ মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে আবু মুছা চৌধুরী স্মরণে স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সভা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার দাবি জানানো হয়।
এদিকে রাউজানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে ফজলুল হক গণপাঠাগারের অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, আগামী ব্যালট যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। যেকোন মূল্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্য রোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি কৌশলে অপপ্রচার চালাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ব্যবহার করে। এই বিভক্তি প্রতিরোধে তথা ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, পারিবারিক ঝগড়াকে সামনে এনে যারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে তাদের বিষয়েও আমার কাছে তথ্য আছে।
তিনি দুঃখ করে বলেন, এমন অনেক কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা আবেদনই করেননি। তাই বলে কি তিনি বা তারা অ-মুক্তিযোদ্ধা?
মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট মানেই আপনিই শুধু মুক্তিযোদ্ধা এমনটি ভাববার অবকাশ নেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, রাউজান থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং রাউজানে সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক গণপাঠাগার সড়ক ও তোরণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণকালে মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক এসব কথা বলেন।
১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।