চট্টগ্রাম, ১৫ নভেম্বর, ২০২২:
শুষ্ক মৌসুম আসলেই কিছু সময়ের জন্য লবণাক্ততা সমস্যায় ভুগতে হয় চট্টগ্রাম ওয়াসাকে। প্রায় প্রতিবছর একই সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। জোয়ারের সঙ্গে সাগরের লোনা জল কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে প্রবেশ করায় পান করার অযোগ্য হয়ে পড়ে ওয়াসার সরবরাহ করা সুপেয় পানি। এতে কিছু সময় পানির উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় ওয়াসা। ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগের পাশাপাশি দেখা দিতে থাকে সুপেয় পানির সংকট। এবার একটু আগেভাগেই সচেতন হয়েছে ওয়াসা। সমস্যা সমাধানে সমন্বয় বৈঠক করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে।
পানিতে লবণাক্ততার সমস্যা নতুন নয়। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছরই এ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন নগরবাসী। ১৯৮৭ সালে হালদা তীরে মোহরা প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ শুরু করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। উৎপাদনে যাওয়ার সাত বছরের মাথায় প্লান্টটিতে লবণপানি আসতে শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিবছর পানিতে লবণাক্ততা দেখা দিলে সেটার জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে আসছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। পদক্ষেপ হিসাবে ওয়াসার পক্ষ থেকে পত্রিকায় গণ-বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করা হয় গ্রাহকদের। জোয়ারের সময় পানির উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ওয়াসা। তাছাড়া বিকল্প হিসাবে টিউবওয়েলের পানির সংমিশ্রণ ঘটানোর মাধ্যমে সংকট মোকাবেলার চেষ্টা চালায়। তবে এরপরও সুপেয় পানির সংকট দেখা দেয় নগরে। অনেককেই খাওয়ার সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য দূর-দূরান্ত পর্যন্ত পাড়ি দেন। এমন সংকট থেকে মুক্তিদিতে গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় বৈঠক করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী পানির প্রবাহ ঠিক রাখার বিষয়ে দুই সংস্থা ঐক্যমত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ফলে এবার লবণাক্ততা ঠেকানো যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণ মিশ্রিত জোয়ারের পানি অনেক দূর পর্যন্ত প্রবেশ করে। জোয়ারের সময় কাপ্তাই হ্রদের পানি কম ছাড়া হলে সাগরের লবণাক্ত পানি উজানের ধিকে উঠতে থাকে। উজানে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। এতে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতেও লবণাক্ততা দেখা যায়। নির্ধারিত মাত্রার বেশি লবণাক্ততা দেখা দিলে সে পানি খাওয়ার উপযুক্ততাও হারাতে বসে। এমন সময় ওয়াসার পানি পান করা বন্ধ করে দিয়ে মানুষ টিউবওয়েল মুখী হয়ে পড়ে। সংকট দেখা দিলে তখন কার্যত ওয়াসার কোনো করনীয়ও থাকে না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, কাপ্তাই লেকে পানির প্রবাহ কমে গেলে লবণাক্ততার সমস্যায় পড়তে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আমরা সমন্বয় বৈঠক করেছি। ভবিষ্যতে যাতে লবণাক্ততা সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পানি প্রবাহ ঠিক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। লেকের পানির ডিসচার্জ লেবেল ঠিক থাকলে আশা করি সমস্যা হবে না। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা ঠিক রাখতে চাই। সেজন্য আগেভাগে বৈঠক করেছি।
কৃত্রিম বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদের। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়। রাঙামাটি সদরসহ আট উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদের পানি বিস্তৃত। কাপ্তাই হ্রদে এখন ১০৮ ফুট পর্যন্ত পানি রাখা সম্ভব হয়। কাপ্তাই জলবিদ্যুকেন্দ্রে ৫টি ইউনিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সময়ে কাপ্তাই লেকে পানির প্রবাহ হ্রাস পায়। এ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনও হ্রাস পেতে থাকে। কাপ্তাই লেখে পানির প্রবাহ হ্রাস পেলে কর্ণফুলী ও হালদাতে লবণ পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে জোয়ারের সময় বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় ঢুকে। এ অবস্থায় মোহরা, মদুনাঘাট ও পোমরা (শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার) পানি শোধনাগারের মাধ্যমে এ লবণ পানি পৌঁছে যায় নগরবাসীর কাছে। পানিতে লবণাক্ততার মাত্রার উপর মানুষের শরীরে নানা রোগব্যাধির শঙ্কাও দেখা দিতে থাকে।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রতি লিটার পানিতে ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকলে তা পান করা যায়। ছবি: সংগ্রহ
Discussion about this post