চট্টগ্রাম,৪ ডিসেম্বর, ২০২২:
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনার জনসভায় বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে মঞ্চের দিকে আসেন জনসভার প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপরেই জনসভা মঞ্চে উঠে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগবে। মহেশখালী, বাঁশখালীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। মিরসরাইয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। প্রত্যেকটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দিচ্ছি। মানুষের কর্মসংস্থান হবে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রবাসী ব্যাংক করে দিয়েছি। জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে যেতে হবে না। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যান মানুষ মুগ্ধ হবে। পোর্টের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামের সড়ক ছয় লেন করা হবে। চট্টগ্রামে যাতে মেট্রোরেল হয় তার সমীক্ষা করে দিয়েছি। যদি সরকারে আসি করে দিব। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর আরও উন্নত করার জন্য বে টার্মিনাল নির্মাণের ব্যবস্থা করেছি। আমরা কালুরঘাট সড়ক ব্রিজ, রেল ব্রিজ নতুনভাবে নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। শাহ আমানত ব্রিজ করে দিয়েছি। চট্টগ্রামের আরও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। এমনকি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। সোলার প্যানেল দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষের উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলীতে একটি টানেল করে দিয়েছি। এই টানেল কিছুদিনের মধ্যে উদ্বোধন হবে। এই টানেল ব্যবহার করে আনোয়ারা হয়ে কক্সবাজার যাওয়া যাবে। আমার আজকে মনে পড়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা। উনি সবসময় বলতেন। আমি উনাকে বলেছিলাম, আমি কর্ণফুলীতে ব্রিজ করবো না, টানেল করবো। কিন্তু দুঃখের বিষয় মহিউদ্দিন ভাই সেই টানেল দেখে যেতে পারেননি।
আগামী নির্বাচনেও টানা মেয়াদে নৌকায় ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাওয়ার আগে একটি ওয়াদা চাই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আগামীতে আপনারা ভোট দেবেন নৌকা মার্কায়, হাত তুলে বলেন। এসময় জনসভাস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে হাত তুলে অঙ্গীকার করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক দিন পর আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হলো। আপনারা যারা এখানে মাঠে আছেন, আসার সময় দেখতে পেলাম, বাইরে যারা আছেন, হয়ত চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না। যত দূরেই থাকেন আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে আমার অন্তরে। বাবা-মা ভাই হারিয়ে আপনাদের কাছেই ফিরে পেতে চাই আমার বাবার ভালবাসা আমার মায়ের ভালোবাসা ভাইয়ের ভালবাসা, আপনারাই আমার পরিবার। আপনাদের কাছেই আমার একমাত্র আশ্রয়। কাজেই আজকে আপনাদের কাছে এসে অত্যন্ত আনন্দিত।
চট্টগ্রামবাসীর প্রতি ভালবাসার আবেগ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিদায়ের আগে বলে যেতে চাই, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেওয়ার কিছু নাই। আছে শুধু ভালবাসা দিয়ে গেলাম তাই।
দ্দরুতে বক্তব্য দিতে এসেই সবাইকে সালাম জানিয়ে চাটগাঁ ভাষায় জানতে চাইলেন, ‘অনরা ক্যান আছন? বেগ্গুন গম আছন নি? তোয়ারার লাই আঁর পেট পুরের। তাই আজ আই আইছি।’ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনেই পুরো জনসভাস্থলে ও আশপাশে উপস্থিত থাকা মানুষ চিৎকার দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাব দিয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো আছি।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আব্দুস সালাম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সহ চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। ছবি: সংগ্রহ