চট্টগ্রাম, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২:
‘আমরা তোমাদের ভুলবনা’ গানের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি সকাল থেকেই বাংলার আকাশ-বাতাসে। ছোট ছোট জাতীয় পতাকা হাতে জটলা চট্টগ্রাম নগরের পথে পথে। বিজয় দিবস উদযাপনের নানা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন। যে বিজয়ের চেতনা-আবেগ-অনুভূতি তুলনাহীন। বাঙালি জাতির সেই অবিস্মরণীয় ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস আজ। বাঙালির মুক্তির দিন।
বাঙালির ২৩ বছরের লড়াই-সংগ্রামের অর্জন, দীর্ঘ সাড়ে নয় মাসের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধ শেষে একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে আজকের এই দিনে বাঙালি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। বীর বাঙালির রক্তে রঞ্জিত সবুজ জমিনে লাল সূর্যখচিত পতাকা উড়েছিল ত্রিশ লাখ শহীদ ও ২ লাখ বাঙালি নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে। আপন বীরত্বে, শৌর্য-বীর্যের পরিচয়ে-স্বমহিমায়।
এই অহঙ্কার ও গৌরবের শ্রেষ্ঠতম উপলক্ষের স্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্ব একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়।
বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তিতে তাই বাঙালি জাতি আজ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদকে। স্মরণ করছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের।
তাই আজ চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ শামিল হয়েছে বিজয় দিবস উদযাপনে। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুস্পস্তবক অর্পণের পর একে একে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সহ নানা সংগঠন শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়।
এরপর সর্বস্তরের জনতার ঢল নামে শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে।
চট্টগ্রামেও আজ দিবসের প্রথম প্রহরে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল চত্বরে বিকল্প শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু করে কর্মসূচি।
ছিল গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত ও প্রার্থনা।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদ চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকা থেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বে আয়োজন করে বিজয় দিবসের বিজয় র্যালি।
জেলা প্রশাসনের বিজয় দিবসের মূল কর্মসূচি শুরু হয় আজ শুক্রবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ৫০ বার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে। একই সময়ে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল চত্বরে বিকল্প শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এজন্য সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল আটটায় নগরীর এম. এ. আাজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। এসময় বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউট, গার্লস গাইড এবং শিশু-কিশোর সংগঠন কর্তৃক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা হয়।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের এসপি এস এম শফিউল্লাহ।
আজ সকাল সাড়ে ১১ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়।এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের এসপি এস এম শফিউল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল।
এদিকে বিজয় দিবসে সিনেমা হলসমূহে বিনা টিকিটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সন্ধ্যা ছ’টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা ও সিম্পোজিয়াম এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
Discussion about this post