চট্টগ্রাম,২৯ জানুয়ারি, ২০২৩
চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতিদিন ছিনতাই ও পকেট মারের শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষ টাকা ও মোবাইল ফোন হারিয়ে এক রকম আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে রয়েছে। কখন আবার ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্রের কবলে পড়েন। কারণ ছিনতাই বেড়েছে ভয়াবহ মাত্রায়।
মোবাইল ফোন ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথাবার্তা এখন মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। গাড়ির ভেতর যেমন পকেটমারের কাছে মোবাইল ও টাকা হারানোর ঘটনা ঘটছে তেমনি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইর থেকে ছোঁ মেরে মোবাইল ছিনিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীর দল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের জটলা থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে ছিনতাইচক্র। এছাড়া আছে অজ্ঞান পার্টি চক্র। শুধু তাই নয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অনেক সময় ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ছিনতাই শিকার বিভিন্ন ব্যক্তি জানিয়েছেন, রাতদিনের কোন পার্থক্য নেই। দিনদুপুরে ঘটছে এসব ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি ও পকেটমারদের দৌরাত্ম্য।
বহদ্দার হাট থেকে আন্দরকিল্লার ১ নম্বর রুটের এক মাহেন্দ্রা গাড়ির যাত্রী আশরাফ হোসেন বলেন, আমি গাড়িতে উঠে সিটে বসার কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নেয়। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের ভিড়ের মধ্যে এটা টান দিয়ে নিয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। সাথে সাথে দুজন গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যায়। গাড়ির ভিতর মানুষের ভিড় ঠেলে তাদের পিছু নেওয়াও সম্ভব ছিল না।
২ নম্বর রুটের মাহেন্দ্রা সহ বিভিন্ন সকল গণ পরিবহনে ছিনতাইকারী সহ বিভিন্ন চক্রগুলো সক্রিয় আছে। এক ব্যাংকার হালিম উদ্দিন জানান, মুরাদপুরে গাড়ির ভেতর তার টাকা ও মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার কথা। যখন তিনি ঘটনা বুঝতে পারেন তখন মুরাদপুর ফেলে এসেছেন। যখন কাউকে সন্দেহ করার সুযোগ ছিল না।
এছাড়া অজ্ঞান পার্টি ধরে নিয়ে টাকা আদায় মুক্তিপণ নেওয়ার খবর জানা যাচ্ছে পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন সূত্রে।
এভাবে নানা কোশলে চলতি পথে ভিড়ের মধ্যে কিংবা যানবাহনে উঠার সময় ছোঁ মেরে নাগরিকদের কাছ থেকে মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে কেটে পড়ছে ছিনতাইকারীরা। প্রায় প্রতিদিনই নগরীর থানাগুলোতে মোবাইল হারানোর জিডি এন্ট্রি হলেও মূলত সেগুলো খোয়া যাচ্ছে ছিনতাইচক্রের হাতে। ছিনতাইকারীর শিকার হলেও অধিকাংশ নাগরিক থানায় অভিযোগ করার আগ্রহবোধ করেন না।
গত কয়েক মাসে কোতোয়ালী থানার নিউমার্কেট মোড় থেকে চট্টগ্রামের সিরাজউদ্দৌলা রোডের দিদার মার্কেট পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার এলাকায় একডজনেরও বেশি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় জিডি হলেও পুলিশ লুণ্ঠিত মোবাইল জব্দ করতে পারেনি। তবে গত বছরের শেষ দিকে কোতোয়ালী ও ডিবি পুলিশের একাধিক অভিযানে স্টেশন রোডের ‘চোরা মার্কেট’ থেকে বেশকিছু চোরাই মোবাইল ফোনসেটসহ ছিনতাইচক্রের কয়েক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
নগরীর জনসমাগমের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের অপতৎপরতা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। প্রায় সব এলাকায় সড়কে রয়েছে কমবেশি ভাসমান হকার। ছিনতাইকারী অপরাধ সংঘটিত করে নিমিষেই সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে।সিএমপি’র দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নোবেল চাকমা বলেন, থানায় প্রায়ই মোবাইল খোয়ানোর অভিযোগ আসে- এটা মিথ্যা নয়। তবে গত দু’মাসের মধ্যে পুলিশ টাইগারপাস ও স্টেশন রোডসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাইচক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত একাধিক অভিযানে সাফল্য পেয়েছে। এসময় ছিনতাইকারী দলের বেশ ক’জন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি শতাধিক চোরাই মোবাইলও জব্দ করা হয়েছে। কারাগারে যাওয়া ছিনতাইকারীরা জামিনে এসে ফের অপরাধে জড়াতে পারে। আমরা সেদিকে নজরদারি বাড়িয়ে দিচ্ছি।
পুলিশের সর্বশেষ তৈরি করা তালিকায় নগরীর টাইগারপাস মোড়, জামালখান মোড়, খাস্তগীর স্কুলের সামনের অংশ, ডিসিহিল-বৌদ্ধমন্দির মোড়, গণি বেকারির পশ্চিম পাশ এলাকা, চট্টগ্রাম কলেজের পূর্ব গেট (প্যারেড কর্নার) মাদারবাড়ি, নালাপাড়া মোড়, মাঝিরঘাট, চন্দনপুরা, বহদ্দারহাট মোড়, নজির আহমদ চৌধুরী রোড, লালখান বাজার মোড়, নন্দনকানন কাটা পাহাড় এলাকা, বাদামতলী মোড়, বড়পুল, বারিক বিল্ডিং মোড়, মনছুরাবাদ ঈদগাঁ মোড়, টিএন্ডটি কলোনি মোড়, সার্সন রোড, বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়ক, কাজীর দেউড়ি, লাভলেন, মাস্টারপুল, সিরাজউদ্দৌল্লা রোডের সাব-এরিয়া, খাতুনগঞ্জ পোস্ট অফিস গলি, বক্সিরহাট, আন্দরকিল্লা, নিউ মার্কেট মোড়, বটতলী রেলস্টশন, কদমতলী মোড়, চৌমুহনী, মহসিন কলেজ এলাকা, সিটি কলেজ মোড়, শুভপুর বাস স্টেশন, হাওয়াই হোটেল গলি মুখ, আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংক মোড়, বনানী কমপ্লেক্সের সামনে, ঢেবারগলি, উপহার সিনেমার সামনে, জিইসির মোড়, সিনেমা প্যালেস, আশরাফ আলী রোড, ফিশারিঘাট, আছদগঞ্জ, এমইএস কলেজ মোড়, প্রবর্তক মোড়, আসকার দীঘির পূর্বপাড়, রহমতগঞ্জ, চাক্তাই-রাজাখালী, আমবাগান, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বলুয়ারদীঘির পশ্চিম পাড়, মিয়াখান নগর, ইকবাল রোড, পাহাড়তলী বাজার, পানির কল, পোর্ট কানেকটিং রোড, ফকিরহাট ৩ নম্বর জেটি গেট, সল্টগোলা রেলক্রসিং, কর্নেল হাট, কাঠগড়, পতেঙ্গা সি বিচ, ফিরোজশাহ কলোনি রাস্তার মোড়, শেরশাহ শহীদ মিনার, রৌফাবাদ কলোনি, হামজারবাগ মোড়, মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে, গোল পাহাড়ের মোড়, ধনিয়ালাপাড়া, বাকলিয়া বগারবিল, ঝাউতলা, চাঁদনী সিনেমা হল, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার মোড়, ট্যানারি মোড়, বড়–য়াপাড়া গলির মুখ, ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরি মোড়, এফআইডিসি রোড, কেডিএস ফ্যাক্টরি গেট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনে, আমিন জুটমিল ও বিবিরহাট মোড় এলাকার অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি ছিনতাইপ্রবণ স্পট হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।
সিএমপি’র দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নোবেল চাকমা বলেন, থানায় প্রায়ই মোবাইল খোয়ানোর অভিযোগ আসে- এটা মিথ্যা নয়। তবে গত দু’মাসের মধ্যে পুলিশ টাইগারপাস ও স্টেশন রোডসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাইচক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত একাধিক অভিযানে সাফল্য পেয়েছে। এসময় ছিনতাইকারী দলের বেশ ক’জন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি শতাধিক চোরাই মোবাইলও জব্দ করা হয়েছে। কারাগারে যাওয়া ছিনতাইকারীরা জামিনে এসে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে তিনি জানান। এজন্য নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
Discussion about this post