সাগর ও নদীতে এত ডলফিন কেন মারা যাচ্ছে
দেশের সাগর ও নদীতে একের পর এক ডলফিন মারা যাচ্ছে। যেন ডলফিনের মৃত্যুর মিছিল চলছে। সপ্তাহ- মাসের ব্যবধান নয়, দিনের পর দিন সাগর, নদী কোথাও না কোথাও মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই কোনো কর্তৃপক্ষের।
গতকাল সীতাকু-ের বাড়বকু-ের মান্দারিটোলার সাগর উপকূলে তিনটি মৃত ইরাবতি ডলফিন উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে মঙ্গলবার বিকালে মান্দারিটোলার উপকূলে তিনটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। পরেরদিন বুধবার এই মৃত ডলফিনগুলোর পচা দুর্গন্ধ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে সীতাকু-ের মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম আহমদ বলেছেন, মৃত ডলফিনের খবর শুনে মনে হয়েছে, এগুলো জালে আটকা পড়ে মারা গেছে।
এর আগে গত ২০ আগস্ট সীতাকু-ের সৈয়দপুরের বগাচতর উপকূলের সংরক্ষিত বন থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করে বনবিভাগের কর্মকর্তারা। পরে সেটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। এক মাস না যেতেই সীতাকু- উপকূল থেকে চারটি মৃত ইরাবতি ডলফিন উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।
এছাড়া পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, সীতাকু- ও আনোয়ারা উপকূল থেকে গত ১ মাসে ১৪ টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া গত ৬ জুলাইয়ের খবরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মেখল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের চানখালী খালের ব্রিজের কাছ থেকে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। ডলফিনটির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিলনা। উদ্ধারকারীরা এটির মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মনে করেছেন। পরে এটির পাখনা কেটে গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হালদা গবেষণাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া মৃত ডলফিনটি মাটিচাপা দেওয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সালের ৬ জুলাই পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ২৯টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়। যেগুলো কিছু আঘাতে কিছু জালে আটকা পড়ে মারা গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে ৩টি নদীতে বসানো জালে আটকা পড়ে মারা গিয়েছিল। ৭টির গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। একটি চর্বি চুরির জন্য হত্যা করা হয়েছিল। বাকি ডলফিনগুলো নৌযানের ধাক্কায় মারা গেছে।
ইরাবতি ডলফিন সাধারণত দল বেঁধে ঘোরে। দলে ৬ থেকে ১৫ টির বেশি ডলফিন থাকতে পারে। এ প্রজাতিটা কিছুটা ভীতু। যদি ডলফিন সাগরের অন্য প্রাণিদের তুলনায় বুদ্ধিমান। স্বাদু ও লোনা পানির মিশ্রণ এলাকায় ইরাবতি ডলফিন বসবাস করে। মূলত মানুষের কাছাকাছি পরিবেশ এদেও পছন্দ। এদেরকে মাছ ধরার ক্ষেত্রে
তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নানা ধরনের জালে আটকা পড়ে এবং এদেও বাসস্থান নষ্ট হবার কারণে এসব ডলফিন মারা যায় বেশি। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রামের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইসমাইর হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, জেলেদেও জালে আটকা পড়ে সাধারণত ডলফিন মারা যায়। ডলফিনের চলাচলের পথ জালমুক্ত রাখতে হবে। তাহলে ডলফিন রক্ষা করা সম্ভব। এজন্য সাগওে টহল বাড়াতে হবে। কিন্তু বনবিভাগের জনবল পর্যাপ্ত নয় বলে তিনি জানান।
এ পর্যন্ত যারা মৃত ডলফিন উদ্ধার কাজে জড়িত ছিলেন তাদের সকলের অভিমত নৌযানের ধাক্কা ও ড্রেজারের আঘাত ও জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে ডলফিন। এছাড়া প্রাণীবিজ্ঞানীরাও একই কথা বলেছেন একই কথা। বিশেষ করে না ধরনের জালে আটকা পড়ছে ডলফিন। যে সব জালগুলো থেকে ডলফিন বের হবার কোন পথ খুঁজে পায় না। এজন্য জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর ডলফিনের চলাচলের পথ চিহ্নিত করতে হবে।
সাধারণত প্রচলিত ধারণা সাগর ও নদীতে ডলফিন মানুষের বন্ধু হিসাবে পরিচিত। অথচ এখন বন্ধুদের জালে আটকা পড়ে মারা পড়ছে একের পর এক ডলফিন। সাধারণত জাল দিয়ে মাছধরা বাড়লে নৌযানও বাড়বে। শুধু জালেই আটকা পড়ছে তা নয়, এর সাথে আছে জলযানের সাথে আঘাত পাওয়ার বিষয়ও আছে। অন্যদিকে হালদায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হয়, সেদিক থেকেও হালদায় ডলফিনগুলো তাদেও বিচরণে বাধার শিকার হচ্ছে। আর যন্ত্রের আঘাতে আহত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে।
Discussion about this post