চট্টগ্রাম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন ভয়ঙ্কর ক্রাইমজোনে পরিণত হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসা, কয়েকটি ডাকাত দল সহ সশস্ত্র ১০টিসন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে ক্যাম্পগুলো। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সাতটি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। বেশিরভাগ ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ আরসার কাছে। আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে জিরো লাইনের তুমব্রু কোনাপাড়া ক্যাম্পটি। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় দশ সশস্ত্র দলের মধ্যে আরসা সক্রিয় রয়েছে উখিয়া, বালুখালী, পালংখালী ও হোয়াইক্যংয়ে, আরএসও ও মাষ্টার মুন্না দল উখিয়ার পালংখালীতে, ইসলামী মাহাজ ও জাবু ডাকাত দল হোয়াইক্যংয়ে, নয়াপাড়া ক্যাম্পে চাকমা ডাকাত দল, নবী হোসেন ডাকাত দল, পুতিয়া ডাকাত দল, সালমান শাহ ডাকাত দল ও খালেক ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে। বেশিরভাগ শিবিরের উপর আরসার নিয়ন্ত্রণ থাকলেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আরসা ও নবী হোসেন ডাকাত দল প্রায়ই মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। যে কারণে বেড়েছে হত্যার ঘটনা। ২০২১ সালে যেখানে ২২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ২০২২ সালে ৩২টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ৬০ টি নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
উদ্বেগজনক তথ্য হলো, কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে যৌন পেশায় জড়িয়ে পড়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী। যা পুরো কক্সবাজার অঞ্চলে এইচআইভি-এইডসসহ মরণঘাতী নানা ব্যাধির সংক্রমণের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা হেপাটাইটিস সি, ডিপথেরিয়া ইত্যাদির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে সাতশ’ ১০ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ছয়শ’ ১২ জনই রোহিঙ্গা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ জন রোহিঙ্গা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ক্যাম্পগুলোতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) ১০ অপরাধী চক্রের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি ও হানাহানি এখন ডাল-ভাতের মত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নতুন করে অস্বস্তি তৈরির কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা।
জানা গেছে, সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে দুষ্কৃতিকারীদের হামলার ঘটনায় নুর কায়েস (২৫) নামে এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া অপর হামলায় রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা (হেডমাঝি) আব্দুর রহিমসহ (৩৮) দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত নুর কায়েস উখিয়ার বালুখালী ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৫৭ ব্লকের বাসিন্দা মো. নজুমউদ্দিনের স্ত্রী।