চট্টগ্রাম, ১০ মে, ২০২৩:
আজ বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বঙ্গোপসাগরের গভীর নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিতে পাওে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে মায়ানমার ও কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানবে। এই ঘূর্ণিঝড়কে সুপার সাইক্লোন বলছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, গভীর নিম্নচাপটি এখন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে আছে। এখন এর গতিপথ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমমুখী। কাল পর্যন্ত এটি এভাবেই চলবে। এরপর যখন সাগরের কেন্দ্রে চলে আসবে তখন আশঙ্কা করছি, এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে; অর্থাৎ আমাদের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের মাঝামাঝি দিয়ে অতিক্রমের আশঙ্কা আছে ১৪ মে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার হতে পারে।
সাধারণত ২২০ কিলোমিটারের ওপরে বাতাসের গতিবেগ উঠলে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এখন এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এটি প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে। আর গভীর নিম্নচাপকেন্দ্রের কাছের সাগর উত্তাল অবস্থায় আছে। এ পরিস্থিতির কারণে দেশের চারটি সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে।খন এর গতিপথ পশ্চিম ও উত্তর–পশ্চিমমুখী। কাল পর্যন্ত এটি এভাবেই চলবে। এরপর যখন সাগরের কেন্দ্রে চলে আসবে, তখন আশঙ্কা করছি, এটি উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। অর্থাৎ, আমাদের কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলের মাঝামাঝি দিয়ে অতিক্রমের সম্ভাবনা আছে ১৪ মে।
আজ বুধবার বিকালে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ঘূর্ণিঝড়বিষয়ক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীূ বলেন, আমরা সবদিক থেকেই প্রস্তুত আছি। প্রতিবারের মতো ইনশাল্লাহ, এবারও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে পারব। সেনা, নৌ, কোস্টগার্ড প্রস্তুত আছে। এটা সুপার সাইক্লোন হবে, এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কক্সবাজার জেলার ৫৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করেছি। মাঠ প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ টন ড্রাই কেকসহ শুকনা খাবার, ২০ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলায় সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতি:আসন্ন ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে নাগরিকদের সেবা প্রদানের পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরের দামপাড়ায় এই কন্ট্রোল রুমের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ জরুরি সেবা নাম্বারে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন চট্টগ্রামবাসী।
অন্যদিকে জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তার প্রস্তুতিমূলক মহড়া অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। কক্সবাজারের ইনানীতে দুই দিনব্যাপী মহড়া শুরু হয়। মহড়ার অংশ হিসেবে ইনানীতে অবস্থিত নৌবাহিনী জেটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উপকূলীয় জেলে ও স্থানীয় লোকজনকে দ্রুততম সময়ে উদ্ধার, প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের কার্যক্রম অনুশীলন করা হয়।
আজ চসিকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপ কমিটির সভায় চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানলে যাতে সাধারণ মানুষের জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখা যায় এবং দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার কাজ যাতে সর্বোচ্চ গতিতে পরিচালিত হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
সভার সিদ্ধান্ত হলো- ৪১টি ওয়ার্ডে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতকরণ, কন্ট্রোল রুম গঠন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ।
নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করা হবে। পাশাপাশি আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়কবাতি নির্বিঘœ রাখার জন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হবে।