চট্টগ্রাম, ১১ জুন, ২০২৩:
চট্টগ্রামে ক্যান্সারের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে। সরকারি পর্যায়, বেসরকারিভাবে কিংবা সাংগঠনিকভাবে ক্যান্সার চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যা ন্সার রোগীদের জন্য আরও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে সিটি সিমুলেটর মেশিন সচল করা হয়েছে। হয়েছে।মেশিনটির দাম প্রায় ৮ কোটি টাকা।
ক্যা ন্সার বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়লে যখন কেমোথেরাপিও কাজ করে না, সেই অবস্থায় ক্যা ন্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োগ করা হবে মাইক্রো ওয়েব অ্যা বলেশন থেরাপি। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন রোগীর উপর মাইক্রো ওয়েব অ্যা বলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে রেডিও থেরাপি বিভাগে।
এদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে পরিপূর্ণ ক্যান্সার হসপিটাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতি শীঘ্রই সেখানে ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হবে।
অন্যদিকে বেসরকারিভাবে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার চালু করেছে এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম। ১১ জুন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা এই ক্যান্সার সেন্টারটি উদ্বোধন করে।
রোগীরা সেখানে মেডিকেল অনকোলজি, রেডিয়েশন অনকোলজি, সার্জিক্যাল অনকোলজি, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, হেমাটোলজি, পেইন-পেলিয়্যাটিভ কেয়ার ইত্যাদি সেবা পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. ইসমাইল খান; সিএমসিএইচ-এর পরিচালক ব্রি. জে. মো: শামীম আহসান; এভারকেয়ার হসপিটালস বাংলাদেশ এর এমডি ও সিইও ডা. রত্নদ্বীপ চাস্কার; এভারকেয়ার হসপিটালস বাংলাদেশ এর হেমাটোলজি ও বিএমটি সেন্টারের কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ; এভারকেয়ার হসপিটালস বাংলাদেশ এর মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ; এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের সিওও সামীর সিং; মেডিকেল ও রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফ; এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডিরেক্টর ডা. দীপক সিং প্রমুখ।
সেখানে ঢাকার মত ক্যান্সারের সুচিকিৎসা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নতুন কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে বিএমটি পরিষেবা সকলের জন্য সহজলভ্য করে তোলা সম্ভব হবে এবং উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে আর বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হবে না বলেও তারা জানান।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অত্যাধুনিক মাইক্রো ওয়েব অ্যা বলেশন থেরাপি পদ্ধতি বিশেষ করে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সুফল দিচ্ছে বলে চিকিৎসকরা দাবি করেছেন। সম্প্রতি এমনই দুজন লিভার ক্যান্সারের রোগীকে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয় চমেক হাসপাতালে।
বিভিন্ন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে কেমো থেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা ব্যতর্থ হলে, সাজারিও সম্ভব না হলে তখন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের রোগীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের রোগী বলা হয়। এ পর্যায়ে রোগীরা চিকিৎসায় আর তেমন একটা সুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে না। তখন মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি দেয়া হয়। সরকারি পর্যায়ে কোন হাসপাতালে এই থেরাপির প্রয়োগ এটি–ই প্রথম বলে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। সে হিসেবে সরকারি পর্যায়ে সারাদেশে একমাত্র চমেক হাসপাতালেই প্রথমবারের মতো এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে।
বেসরকারি পর্যায়েও রাজধানী ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এই থেরাপি চালু আছে।
চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজিস্টরাই (ইন্টারভেনশনাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ) এই পদ্ধতিতে থেরাপি প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে ইন্টারভেনশনাল অনকোলজিস্ট চট্টগ্রামে একজনও নেই। ক্যান্সার বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ঢাকার এক বেসরকারি হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল অনকোলজিস্ট ডা. আহমেদ সারোয়ার মোর্শেদ সম্প্রতি চমেক হাসপাতালে আসেন। তার নির্দেশনায় চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের একটি টিম এই থেরাপি প্রয়োগ করেন।
জানা গেছে, অত্যাধুনিক মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগে সারাদেশে মাত্র তিনজন ইন্টারভেনশনাল অনকোলজিস্ট রয়েছে। তিনজনই বেসরকারি পর্যায়ের। তাদের হচ্ছে ডা. আহমেদ সারোয়ার মোর্শেদ।
ডা. আহমেদ সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, বিশেষ করে প্যালিয়াটিভ ট্রিটমেন্টের আওতায় জটিল রোগীদের এই থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। যেসব রোগীদের আর তেমন কোন আশা নেই, এমন রোগীদের এই থেরাপি দেয়া হয়। এই থেরাপি ক্যান্সার দূর করে রোগীকে সুস্থ করে, এমন দাবি করা যায় না। তবে থেরাপির পর ওই ক্যান্সার রোগী আরো কিছু দিন মোটামুটি কোয়ালিটি লাইফ লিড করতে পারে।
মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি ব্যথা ছাড়াই অত্যাধুনিক একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে খুবই জটিল পর্যায়ের একজন ক্যান্সার রোগী আরো বেশ কিছুদিন স্বস্তিতে থাকতে পারেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যা ন্সারের জটিল রোগীদের জন্যএ মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি এবং রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এই থেরাপির মাধ্যমে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে থাকা টিউমার বা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া কোষ শনাক্ত করে তা পুড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস করা হয়ে থাকে। সিটি সিমুলেটর নামে ক্যান্সারের অত্যাধুনিক একটি মেশিনের মাধ্যমে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে (সরকারি পর্যায়ে) খরচও তুলনামূলক কম বলে জানান চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালও আধুনিক মানের চমাশিহা ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে এই হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। তবে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা চলছে। ইতোমধ্যে এ হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে কেমোথেরাপি গ্রহণ করেছে ৪ হাজার ১৪২ জন রোগী এবং অন্তঃ ও বহির্বিভাগে মোট ৬ হাজার ৭৭৬ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন।
Discussion about this post