চট্টগ্রাম, ২৫ জুন, ২০২৩:
বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠায় লোডশেডিং কমে এসেছে। ২০ দিন বন্ধ থাকার পর ফের উৎপাদন শুরু হয়েছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এখন এই কেন্দ্রটি থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। বৃষ্টি বাড়ায় কাপ্তাই হ্রদে হ্রদে পানিও বেড়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও বেড়েছে।
গত শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দরের কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে ৬৪ হাজার ৩০০ টন কয়লাবাহী পঞ্চম জাহাজ ভিড়েছে মাতারবাড়িতে।
আর পায়রায় ৪১ হাজার ২০৭ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে নোঙর করেছে মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আথেনা। গত শনিবার জাহাজ থেকে এসব কয়লা খালাসের পর উৎপাদনে যায় পায়রা।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই করে ছাড়ার ১০ দিন পর পায়রা বন্দরে পৌঁছেছে জাহাজ এমভি আথেনা। এ কয়লা খালাস করতে আরও ২-৩ দিনের মতো সময় লাগবে। ২৫ জুন পুনরায় চালু হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে প্রথমে একটি ইউনিট চালানো হবে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে। আগামী ১ জুলাই ৩৬ হাজার ৫৭০ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে এম ভি পাভো ব্রেভ নামের আরেকটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে।
রোববার (২৫ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি ইউনিটের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আবদুল হাসিব।
প্রয়োজন হলে ঈদের পর দ্বিতীয় ইউনিটও চালু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপাতত ৪১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন কয়লা দিয়ে একটি ইউনিট চালানো হলে আট দিন চলবে। ৩০ জুনের মধ্যে আরও একটি জাহাজ আসছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আরও ১৬টি জাহাজ আসবে। পায়রায় একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ায় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা অঞ্চল সহ সারা দেশের লোডশেডিং কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাপানের সহযোগিতায় মাতারবাড়িতে গড়ে ওঠা ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দুই মাসে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে পাঁচটি জাহাজে এল ৩ লাখ টনের বেশি টন কয়লা। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল ৬৭ হাজার টন কয়লা নিয়ে প্রথম জাহাজ হিসেবে ‘এমভি অউসো মারো’ মাতারবাড়ি কোল পাওয়ার টার্মিনালে ভিড়ে।
এদিকে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কিছুটা বাড়ায় দেশের একমাত্র কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি মাত্র ইউনিট চালু থাকলেও পানি বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১০ দিন আগেও শুষ্ক সময়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি মাত্র ইউনিটে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় হ্রদে পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ফলে বর্তমানে দুটি ইউনিট চালুর মাধ্যমে মোট ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত নিয়মিত হলে ধীরে ধীরে বাকি ইউনিট গুলো চালুর মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে বলে কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি উপর নির্ভরশীল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ১ মাস পূর্বেও পানি সংকটে উৎপাদন সর্বনি¤œ পর্যায়ে চলে এসেছিল।বর্তমানে ১নং এবং ২নং ইউনিট দিয়ে দৈনিক ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি এইভাবে যদি বৃষ্টিপাত নিয়মিত চলমান থাকে এবং হ্রদের পানি বাড়ে তবে আরও ইউনিট চালু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়বে।
দেশের সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি ৫ টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪২ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।