চট্টগ্রাম,২৯ জুন, ২০২৩:
নির্বাচনকেন্দিক বাংলাদেশের রাজনীতির টালমাটাল হাওয়ায় কোরবানির ঈদের পর রাজনীতি কোনদিকে বাঁক নেয় সেটা এখন আলোচিত বিষয়। বিগত কয়েক মাস ধরে রাজনীতিতে কিছুটা উত্তেজনার পাশাপাশি নির্বাচনি বাহাস বেশ জমে উঠেছে। বিএনপি অবাধে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপারে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের তৎপরতা বেড়েছে গত কয়েকটি নির্বাচনের চেয়ে বেশি।
সবচেয়ে বড় ঘটনা নিষিদ্ধ হবার নানা প্রক্রিয়া ও আলোচনার মধ্যে জামায়াত ইসলামী ব্যাপক পরিসরে সমাবেশ করেছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেছেন, তার সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরিশাল, খুলনা, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণ করেছি যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ হতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতে পারে না।
অপরদিকে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলটির নেতৃবৃন্দ বলে যাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তারা দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে আওয়ামী লীগ এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে বলে অভিযোগ করে।
জনগণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায় দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেখেছি, জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেটা সম্ভব নয়। সে কারণে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। যেন সেই নির্বাচনে জনগণ বিএনপিকে ভোট দিতে পারে এবং প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এটি বারবার প্রমাণ হয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলে দেশের মানুষ যতটা খুশি হতেন, তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হওয়ায়। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, সেটা হলো বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করেছে— এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ওয়াদা পূরণ করেছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারবে কি না তার চেয়ে বড় কথা হলো গণতন্ত্র জয়লাভ করেছে।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ মধ্য জুলাই থেকে বর্তমান সরকারের পদত্যাগের একমাত্র দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামবে।
এক দফা দাবিতে সংসদ বাতিল ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ অন্যান্য দাবিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের দিকে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে।
২৬ জুন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ঈদের পর আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
এদিকে বিএনপির নির্দলীয় সরকারের রূপরেখাকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে রাজপথসহ সারা দেশের মাঠ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। কোরবানির ঈদের পর থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। রাজধানী থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ, জনসভা, হাটসভা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে একদিকে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা হবে, অন্যদিকে রাজনীতির মাঠ দখলে রাখবেন।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতে বিদেশি কূটনৈতিকদেরও ব্যাপক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে বারবার বাংলাদেশে আসাযাওয়া করছেন মার্কিন কূটনীতিকরা। কথা বলছে, চীনও।
আর আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
তারা বলেছে,আগামী নির্বাচনে যদি কোনো অনিয়ম হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মার্কিন ভিসা প্রদান করা হবে না।
আমেরিকা ছাড়াও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জাপানকে কূটনৈতিকভাবে তৎপরতা দেখাতে দেখা গেছে। ছবি: সংগ্রহ
Discussion about this post