পশ্চিম বঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী থাকার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির জন্য ভবানিপুরে বিজয় অনিবার্য ছিল। আজ ভবানিপুর আসনের উপ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় মমতার বিজয় নিশ্চিত হবার পাশাপাশি তার মুখ্যমন্ত্রীত্বও টিকে গেল। এতে দীর্ঘ সময় ধরে মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে যে ঘনঘটা চলছিল সেই শঙ্কা এখন কেটে গেল। রোববার ভোট গণণা শেষে দেখা যায়, মমতা ভোট পেলেন ৮৫ হাজার ২ শ ৬৩ ভোট, আর বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪২৮ ভোট। আর জয়ী হয়েছেন ৫৮ হাজার ৮৩৫ ভোটে। ভোট হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার।
আজ ফল ঘোষণার দিন সকাল থেকে তিরিশ-বি হরিশ চ্যাটার্জি সড়কের নিজ বাড়ির দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন ভবানীপুর উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। তবে সকাল থেকে ভোটের ফলাফলে এগিয়ে যাওয়ার খবরে সকাল ১০টা থেকে তার বাড়িতে জনতার ঢল নামে। চারদিকে আবিরের খেলা জমে উঠে। বাড়ির সামনে বিজয়োল্লাস।নির্বাচন কমিশন দু্ইটার পর আনুষ্ঠানিকভাবে আটান্ন হাজার হাজার আটশো বত্রিশ ভোটে মমতার বিজয় ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বাড়ির বের হন। সাদামাঠা শাড়ি পরেই বের হন তিনি। তিনি বলেন, ভবানিপুরের মানুষের কাছে ঋণী তিনি। তারা তাকে তিন বার বিজয়ের মালা পরিয়েছেন। তিনি বলেন, তৃণমূলকে ভয় দেখিয়ে কোনো কিছু করা যাবে না। সারা বাংলা খুব আঘাত পেয়েছিল যখন সব ভোটে জিতেও একটায় জিততে পারিনি। সেটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সেটা নিয়ে এখন কিছু বলছি না। অনেক চক্রান্ত চলেছিল। সব চক্রান্ত জব্দ করে দিয়েছে বাংলার মানুষ, ভবানীপুরের মানুষ। এসময় সাথে ছিলেন বিধাননগরের পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের প্রধান কৃষ্ণা চক্রবর্তী। আর ভাই কার্তিক বন্দোপাধ্যায়ের স্ত্রী।
মমতার বিজয় যদিও নিশ্চিত ছিল। তাই সকাল থেকে গোটা ভারতের নজর ছিল এই ভোট গণণার দিকে। আগেও দুইবার ভবানীপুরের এই আসন থেকে জিতেছিলেন মমতা।
এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনে আসনটি শোভনদেব চট্টপাধ্যায়কে ছেড়ে নিজে দাঁড়িয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনে।
তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর সেখানে তিনি হেরে যান; হারেনও এক সময় তারই ডেপুটি শুভেন্দু অধিকারীর কাছে।
মমতা হারলেও তৃণমূলই সরকার গড়ে, মমতাকে তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রীও বানায়
ভারতের নিয়ম অনুযায়ী কেউ হেরে যাওয়ার পরও তার দল যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং দলের নির্বাচিত সদস্যরা যদি তাকে নেতা নির্বাচিত করেন, তাহলে তার মুখ্যমন্ত্রী হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
তবে ভোটে না জিতেও মুখ্যমন্ত্রী হলে তাকে ওই পদে বসার ১৮০ দিনের মধ্যে কোনো একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। তা না পারলে ছেড়ে দিতে হবে পদ।
মমতাকে জিতিয়ে আনতে শোভনদেব পরে ভবানীপুরের আসন থেকে পদত্যাগ করে নেত্রীর জন্য পথ খুলে দিয়েছেন।
২০২৪ সালে পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম দাবিদার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সে কারণেই নরেন্দ্র মোদির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কয়েক মাস ধরে একত্রিত করছিলেন মমতা। এই উপনির্বাচন যেমন বাড়তি শক্তি দিল মমতাকে, তেমনি বাড়তি অক্সিজেন যোগান দিল মোদিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে।