চট্টগ্রাম, ৬ আগস্ট, ২০২৩:
টানা তৃতীয় দিনের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ এলাকাই কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে নি¤œ এলাকার জলাবদ্ধতা ছিল ১০/১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এছাড়া বর্ষণ বেড়ে গেলে যেসব এলাকার পানি সওে গিয়েছিল সেসব এলাকায় আবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে রবিবার দিন গত ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সময় নগরের নি¤œ এলাকা জলমগ্ন ছিল।
ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম নগরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। নি¤œ এলাকা থেকে চলাচলকারী প্রায় সকল যানবাহন সকাল থেকে বন্ধ ছিল। এতে অফিসগামী ও কর্মস্থলে যেতে মানুষদেও ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।
সকাল আটটা থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে শুরু হয় টানা বর্ষণ। দুপুর ২টা পর্যন্ত বর্ষণে তলিয়ে যায় নগরী। বিকালের দিকে কিছু যানবাহন চলাচল শুরু হলেও ভাড়া গুণতে হয়েছে অত্যধিক।
এছাড়া নি¤œ এলাকার বাসাবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের চুলায় হাঁড়ি চড়ানো দূরে থাক আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে খাবারের সন্ধান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পানিবন্দি এলাকাগুলোতে বিতরণের জন্য ১০ হাজার মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত রেখেছে তারা।
বাসাবাড়ির পাশাপাশি নগরীর দোকানপাট, ্যিবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে যাওয়ায় যেমন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তেমনি পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এভাবে শুধু ভোগান্তি ও দুর্ভেোগ নয় জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষের কষ্টের সীমা পরিসীমা নেই।
বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা,হালিশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ ও শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, ছোটপোল ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, কেবি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, তিন পুলের মাথা, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুরের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ও অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
সকাল থেকে দুপুর অবধি প্রবল বর্ষণের পর বিকাল সাড়ে চারটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে এসব নি¤œ এলাকা আবার পানিতে তলিয়ে যায়।
এভাবে গতকাল সারারাত ও রবিবার সারাদিন কোমর ও হাঁটু সমান পানির সাথে ঘরে বাইরে লড়াই করেছে নগরীর মানুষ।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে- ভারী বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আটকে যাওয়া পানি চলাচল নির্বিঘœ করতে খাল ও নালাগুলোর যেসব স্থানে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে, সেগুলো অপসারণ করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে চট্টগ্রাম নগরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১৮ মিলিমিটার। এরমধ্যে রোববার (৬ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৬৩ মিলিমিটার। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১ মিলিমিটার।
২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে সেটিকে আমরা অতি ভারী বর্ষণ বলা হয়। এর কম হলে তাকে ভারী বর্ষণ বলা হয়।
প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের উপর ও পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারীদেও ঝুঁকি এড়াতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারীদেও সরিয়ে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা আকবরশাহ এলাকার বিজয় নগর ও ঝিল পাহাড়ে বসবাসরত ২৫০টি পরিবারকে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। মহানগরে ৬টি সার্কেলের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম জানমাল রক্ষার্থে কাজ করছে।
সিটি কর্পোরেশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরীতে পানিবন্দি ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা জালালাবাদ, পশ্চিম ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী, পুর্ব পাহাড়তলী, লালখান বাজার ও চকবাজার ওয়ার্ডের তিনশ’ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্র্রে চলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে খাবার, স্বাস্থ্যসেবা থেকে সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রোববার জলমগ্ন এলাকা ও পাহাড়ি এলাকায় পরিচালিত কার্যক্রমের বিষয়ে চসিক মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানান, স্থানীয় কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাউসিয়া কমিটি, চসিকের স্ট্রাইকিং ফোর্স ও আরবান ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। নগরীর এই ছয়টি ওয়ার্ডের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচার চালালে তাদের মধ্যে প্রায় ১০০টি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র এবং অন্যরা নিরাপদ এলাকায় থাকা স্বজনদের বাসায় চলে যান। আপাতত তারা দুর্যোগের ঝুঁকি না কাটা পর্যন্ত ফিরোজশাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ও নিরাপদ এলাকায় স্বজনদের বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়।
Discussion about this post