চট্টগ্রাম, ১১ আগস্ট, ২০২৩:
সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে কর্পোরেটদের আধিপত্য বিস্তার হয়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতার কারণে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ করে দেয়ায় সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।
ছোটছোট খামারি ও ডিলাররা পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটালেও আজ তারা অসহায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ লক্ষ প্রান্তিক উদ্যোক্তার দাদন ব্যবসায়ীর ব্ল্যাংক চেকের মাধ্যমে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কোম্পানির দাদন ব্যবসার কাছে। প্রান্তিক খামারিদের ডিম ও মুরগি বাজারে আসলে দাম কমে যায়, উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়।
বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০.৮৭ টাকা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা হলেও বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে কমে ১৪০ টাকা বিক্রয় করতে হয়। বাজার কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এসএমএস দিয়ে, বাজার বাড়াতে চাইলে বাড়ে কমাতে চাইলে কমে। অন্য দিকে কর্পোরেট গ্রুপের মুরগি বাজারে আসলে দ্বিগুণ লাভ করেন। কর্পোরেটদের একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৯ থেকে ১৩০ টাকা। প্রান্তিক ও কর্পোরেটদের উৎপাদন খরচই বলে দেয় বাজারের পরিস্থিতি।
সরকার চাইলে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ যাচাই করে দাম কমানো সম্ভব।
২০২১ সালে ১ কেজি ভুট্টার দাম ২৮টাকা, ৫০ কেজির ১ বস্তা পোল্ট্রি ফিডের দাম ছিল ২৫০০ টাকা, ২০২২ সালের শুরুতে ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা, ৫০ কেজির ১ বস্তা ফিডের দাম ছিল ২৭০০ টাকা, ২০২২ সালের ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দোহাই দিয়ে লাগামহীন ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়, লাস্ট ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ভুট্টার দাম হয় ৪১ টাকা কেজি, পোল্ট্রি ফিডের ৫০ কেজি বস্তার দাম পৌঁছায় ৩৭৪০ টাকায়।
কিন্তূ মার্চ ২০২৩ থেকে ভুট্টার দাম কমে দাঁড়ায় ২৪ থেকে ২৬ টাকায় ,পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনে ৬০% ভুট্টা প্রয়োজন হয় সেই ভুট্টার দাম কমেছে কেজিতে ১৬ টাকা এবং অন্য উপাদান ৪০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড উৎপাদনের সকল পণ্যের দাম কমেছে কিন্তু পোল্ট্রি ফিডের দাম প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা বাড়িয়ে কমেছে কেজিতে ৩ টাকা মাত্র।
ফিড কোম্পানিগুলোর ফিড ও বাচ্চার সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। ডিম ও মুরগির দাম কমিয়ে রাখতে ও খামারিদের উৎপাদিত পণ্যে যৌক্তিক মূল্য সংযোজন করতে হবে । অন্যদিকে প্রান্তিক খামারি কোম্পানিকে মুরগি দেয়ার শর্তে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে নামে চলে দাদন ব্যবসা। ৫০ কেজির ১ বস্তা ফিডের দাম ২৬০০ টাকা ধরে হিসাব করেও সব সময়ের ১টি মুরগির বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরা হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তিতে না গেলে ফিডের বস্তার দাম ৩৫৫০ টাকা ও বাচ্চার দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা দিয়েও অনেক সময় চুক্তির বাইরে বাচ্চা বিক্রয় করেন না। একদিকে প্রান্তিক খামারি হারিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে কর্পোরেট গ্রুপগুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।
এই বৈষম্য দূর করে বাজারে প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিম মুরগি উৎপাদনে ৮০% শেয়ারের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না হলে ডিম ও মুরগি বেশি দামে কিনে খেতে হবে, জিম্মি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও বাজার ব্যবস্থা। স্থিতিশীল বাজার রাখতে হলে কোম্পানিগুলো ১০০% ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন কওে তারা তাই করবে এবং তাদের কন্ট্রাক ফার্মিং ও কোম্পানিদের ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করবে কখনো বাজার সিন্ডিকেট হবে না। খামারিদের সংগঠন বিপিএ দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সচিব মহোদয় সহ প্রাণিসম্পদ এবং ভোক্তা অধিদপ্তর সহ সকল কর্মকর্তাদের অবহিত করে স্মারক লিপি প্রদান করে পোল্ট্রি বোর্ড ও মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার দাবির জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগি পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে কমিটি করতে বলা হয় প্রাণিসম্পদকে, সেই কমিটি কর্পোরেট সিন্ডিকেটদের আধিপত্যে চলছে। সেখানে খামারিদের সংগঠন বিপিএ কে রাখা হয়নি কমিটিতে। রাখা হয়েছে ২০% উৎপাদনকারি কর্পোরেট গ্রুপের কয়েকটি এসোসিয়েশন ও এসএমএস দিয়ে যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নিয়ে কমিটি করা হয়। ডিম ও মুরগির যোক্তিক মূল্য নির্ধারণ কমিটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক খামারিদের রক্ষায় প্রাণিসম্পদের ডিএলএস-কে দায়িত্ব দিলেও তাদের সাথে খামারিদের যোগাযোগ নেই। পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিএলএস এর কর্মকর্তাদের কোন ভূমিকা দেখছি না। তারা কর্পোরেটদের সহযোগিতা করে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় ৮০%ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারি প্রান্তিক খামারিদের মিটিং এ ডাকা হয় না ও মতামত নেয়া হয় না। ২০% ডিম ও মুরগি উৎপাদনকারী কর্পোরেট গ্রুপদের নিয়ে মিটিং ও আলোচনা করেন। এতে কখনই সুফল আসবেনা।তাই পোল্ট্রি শিল্পের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে পোল্ট্রি শিল্পের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। পোল্ট্রি শিল্প ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখুন। ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান রক্ষা করুন। বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post