চট্টগ্রাম, ১৭ আগস্ট, ২০২৩:
বহুলপ্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই সরকারের এই উদ্যোগ বলে বক্তব্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ উদ্বোধনের দিন থেকে কেউ চাইলে এই প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন করে যুক্ত হতে পারবেন। এজন্য সরকার পৃথক একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। সেটি হচ্ছে www.upension.gov.bd। সরকারি চাকরিজীবীরাও আপাতত এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না। বাদ পড়বেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাপ্রাপ্ত ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিকভাবে পেনশন স্কিম-প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা এবং প্রবাসী উদ্বোধন করেন।
স্কিমটি চালু করার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করলাম। প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম আজ উদ্বোধন করা হলো। অন্য দু’টি স্কিম পরে চালু করা হবে।’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেহেশত থেকে দেখে খুশি হবেন যে সরকার তাঁর জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টা করছে, যার জন্য তিনি তা’র সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন এবং তিনটি জেলা -গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইভেন্টের সাথে যুক্ত হয়।
সরকারি কর্মচারি ছাড়া চার ধরনের উপার্জনকারী মানুষকে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত করবে। তারা হলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি, প্রবাসী, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিক, বছরে ৬০ হাজার টাকার কম আয়ের মানুষ। বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক ১৮ বছর বয়স থেকে এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা দিয়ে ষাট বছর বয়সের পর পেনশনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
চাঁদার (কিস্তি) চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ টাকা পেনশন পাবেন
১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ এই কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারবেন।
ব্যক্তির বয়স যত বাড়বে অর্থাৎ যে যত দেরিতে পেনশনে যুক্ত হবে, আনুপাতিক হারে কমতে থাকবে সুবিধাও।
প্রবাস: বাংলাদেশি যারা বিদেশে কর্মরত তাদের জন্য হচ্ছে প্রবাস স্কিম। মাসিক ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তি মানে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে যুক্ত হতে পারবে।
প্রগতি: বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য হচ্ছে প্রগতি স্কিম। মাসিক দুই, তিন ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন বেসরকারি চাকরিজীবীরা। বেসরকারি কর্মচারির ৫০ শতাংশ চাঁদা চাকরিজীবী নিজে ও মালিকপক্ষ ৫০ শতাংশ হারে বহন করবে। যদি চাকরিরত প্রতিষ্ঠান কর্মচারীকে এই স্কিমে যুক্ত না করলে ওই কর্মচারি নিজ উদ্যোগে যুক্ত হতে পারবেন।
সমতা: যারা সরকারি, বেসরকারি কর্মচারি বা প্রবাসী নয়, নিজ উদ্যোগে জীবিকা নির্বাহ করে শ্রমিক, কৃষক, মজুর শ্রেণির মানুষ এই পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত। তারা এক, দুই, তিন এবং পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন।
সুরক্ষা : স্বল্প-আয়ের নাগরিক অর্থাৎ অতি দরিদ্র মানুষ যাদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম তারা পেনশন বীমায় যুক্ত হতে চাইলে সুরক্ষা স্কিম হচ্ছে তাদের। তাদের কিস্তির পরিমাণ মাসে ১০০০ টাকা। প্রতিমাসে স্কিমে অংশগ্রহণকারী দিবেন ৫০০ টাকা কিস্তি। আর সরকার দিবে ৫০০ টাকা। দারিদ্র্য নিরসন এই স্কিমের অন্যতম লক্ষ্য। তবে তারা যদি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে পেনশন স্কিমে অংশ নিতে হলে এই সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। অন্যথায় এ স্কিমে যুক্ত হতে পারবে না।
বিধিমালা অনুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন গ্রাহক। চাঁদা পরিশোধের পর তিনি মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন ১৫ বছর।
জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাশ হয়। ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে ১৩ আগস্ট এর বিধিমালা জারি করা হয়
ধারাবাহিক তিনটি কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। পরবর্তী সময়ে পুরো বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল হবে না। নির্দিষ্ট তারিখে চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানাবিহীন পরিশোধ করা যাবে। এরপর প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে হিসাবটি সচল করা যাবে। এছাড়া একজন চাঁদাদাতা আগাম কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন।
সেখানে আরও বলা হয়, অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে ১২ মাস পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না। আরও বলা হয়, কোনো চাঁদাদাতা ৭৫ বছরের আগে নিখোঁজ হলে এবং নিখোঁজ হওয়ার পর সাত বছর অতিবাহিত হলে তার হিসাব স্থগিত করে নমিনিকে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এছাড়া কেউ চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে অর্থ উপার্জন না করতে পারলে তাকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা ঘোষণা করতে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে।
সরকারের পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে টাকা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত তফশিলি ব্যাংক বা ব্যাংকের শাখা, উপশাখাকে সম্মুখ অফিস হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে এই সম্মুখ অফিসের কেউ দুর্নীতি বা অনিয়ম করলে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া এই স্কিমের আওতায় চাঁদাদাতা স্কিমের স্বত্ব অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। তবে স্কিম চলাকালীন কেউ মারা গেলে মনোনীত নমিনির নামে হস্তান্তর করা যাবে। এছাড়া চাঁদাদাতা তার মোট জমানো অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। এটি পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এখনও পূর্ণাঙ্গ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় আপাতত অর্থ বিভাগের আওতাধীন সংস্থা হবে এটি। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে গত জুলাইয়ে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খান।
Discussion about this post