চট্টগ্রাম, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩:
নতুন নির্মিত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ১০২ কিমি। এ প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে আঠারো হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ অবকাঠামো বর্তমান সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। কিন্তু গত আগস্টের সপ্তাহব্যাপি বন্যায় রেললাইনটি বেঁকে গেছে।
রেললাইনটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় আধা কিলোমিটার জুড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে রেললাইন উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। স্লিপারের মাঝে পাথর সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
বন্যায় এই ক্ষতিগ্রস্ত রেল লাইন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে দেশজুড়ে।
বিশেষজ্ঞরা এই নতুন রেল লাইন কেন ক্ষতিগ্রস্ত হল তা বের করতে জাতীয় কমিটি করার কথা বলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমাদের দেশের কালচার হচ্ছে ভেঙেছে ওইটাকেই আবার পুনর্নির্মাণ করা। কেন ভেঙ্গেছে এই কারণটা খুঁজে বের করে ভবিষ্যতে যাতে এই ভুলের মধ্যে না পড়ি সেটা ঠিক করতে হবে।যেটা ঘটে গেছে সেটা কেন ঘটেছে সেটা হিসাব-নিকাশ করা হোক। জাতীয় কমিটি হওয়া উচিত একটা।”
তবে রেলের প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত এই রেল লাইনের সমস্যাকে নগন্য ক্ষতি হিসাবে দেখছে। যা ঠিক করতে কোটি টাকা খরচ হতে পারে। একই সাথে তারা বলছেন, এটা দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করা সম্ভব।তারা যে অক্টোবর মাসে রেল লাইনটি চালু করার টার্গেট নির্ধারণ করেছে সেই নির্ধারিত সময়ে তারা এই রেললাইন চালু করতে পারবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেছেন,এর আগে তো এখানে এ রকম বৃষ্টিপাত হয়নি।তিনি রেকর্ড বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলকে দায়ি করে বলেন, দুই দিনে আটশ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত আগে কখনো হয়নি। ক্লামেইটের এই অদ্ভুত আচরণের বিষয়গুলো আমাদের আগে জানা ছিলনা।
তিনি জানান কক্সবাজার রেল লাইনের একশ কিলোমিটারে ১৭৩টি কালভার্ট, ৩৮টি ব্রিজ তৈরি হয়েছে। একশ কিলোমিটার রেল লাইনে সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা পানি নিষ্কাশনের জন্য ওপেন রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, নতুন এই রেললাইনে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। একশ কিলোমিটার রেল লাইনে সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গা পানি নিষ্কাশনের জন্য ওপেন রাখা হয়েছে।
রেললাইনের ক্ষতি এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতার ক্ষয়ক্ষতির কারণে ড. নিশাত ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “প্রচুর ওপেনিং রাখার দরকার ছিল যাতে করে পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফেইলিওর। আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমি খুবই লজ্জিত। হাইড্রোলিজক ফেইলিওর, আমি হাইড্রোলজি পড়িয়েছি আমি খুবই লজ্জিত, পিওর ফেইলিওর।”
কালভার্টের সংখ্যা কমানো হয়নি বরং বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘রোড থেকে আমাদের রেললাইন অনেক উপরে। সড়ক পুরোটাই ডুবে গিয়েছিল। সেই তুলনায় আমার তো মাত্র ৪৫০ মিটার বা আধা কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কক্সবাজারের দিকে কিছুই হয়নি।”
বর্তমান সময়ে এই ধরনের বৃষ্টিপাত অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। রেললাইনের ডিজাইন করার সময় পূর্ব থেতে পশ্চিম দিকে পাহাড়ি ঢলের বিষয় হিসাব করা হয়নি।জলবায়ু পরিবর্তন, কম সময়ে অধিক বৃষ্টিপাতের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি।
পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন,‘‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নকশা ও পরিকল্পনায় স্থানীয় জনসাধারণের অভিজ্ঞতা ও মতামতকে যথাযথ বিবেচনা করা হয়নি।প্রকল্পে ডিজাইনের সময় স্থানীয় জনসাধারণের মতামত নেয়া খুবই জরুরি ছিল। পিপলস পার্টিসিপেশন ছাড়া কিন্তু প্রজেক্ট ডিজাইন করা সম্ভব না। এইটাই আমাদের একটা বড় গলদ।’’ -বিবিসি বাংলার খবর
Discussion about this post