চট্টগ্রাম, ২২ আগস্ট, ২০২৩:
চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব নেওয়ার চারমাস পর সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি সভা করেছেন নতুন চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বন্দর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সভা করেন তিনি।
সভায় বন্দর চেয়ারম্যান বন্দর চ্যানেলকে ঠিক রাখতে আগামী ১০ বছরের জন্য হাইড্রোগ্রাফি মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে জানিয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। খালে-বিলে নদীতে বর্জ্য না ফেলার আহ্বান জানান মোহাম্মদ সোহায়েল।
তিনি বলেন,২০২৪ সালে ১১ মিটার কিংবা সাড়ে ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে। এজন্য দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে চলছে।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বন্দরের জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর মধ্যে দিয়ে নতুন এক মাইলফলক অর্জন করে চট্টগ্রাম বন্দর। অপেক্ষাকৃত বড় ও বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ আসার সুযোগ উন্মেচিত হওয়ায় পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ের পথ তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারও চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো, ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কি সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মতো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে গত একযুগে।
তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং কম রপ্তানিতে আমাদের আয় বেড়েছে। জুন মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে, যার ৮৪ শতাংশ জুড়ে ছিল তৈরি পোশাক। আর বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশক। বর্তমানে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্র-বিশেষে অন-অ্যারাইভেল বার্থিং প্রদান করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। জেনারেল কার্গো ওঠানামা হয়েছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৩ টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৫৩ টি। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবিচ্ছন্ন কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা।
তিনি আরো বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অচিরেই এটাকে পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া আগামী মাসে অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বে টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ হবে। অক্টোবর মাস বে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এই ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। আর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১০-১২ হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে।
মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ২০২২-২৩ সালে ২টি ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল ক্রেন, ২টি ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল ক্রেন, ৬টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন ৩৪টি কিউজিসি এবং ২টি কন্টেইনারে মোভার বন্দরের বহরে যুক্ত হয়েছে। প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন বহরে যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে ১৮টি গ্যান্ট্রি ক্রেন ফ্লিটে রয়েছে। এছাড়া বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৬ লাখ বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এ ইয়ার্ডসমূহে কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস থেকে ৫৩ হাজার ৫১৮ তে উন্নীত হয়েছে। লালদিয়ার চর থেকে ৫২ একর জায়গা উদ্ধার করে সেখানে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরে কেমিক্যাল শেড তৈরি করা হচ্ছে এবং মালটিপারপাস কার শেড তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ অর্জনসহ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর। আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে এই বন্দর এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান।
Discussion about this post