চট্টগ্রাম, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেছেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে অর্থাৎ টানেলের উত্তর প্রান্তে তিনি টানেল উদ্বোধনের ফলক উন্মোচন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল কাল থেকে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তবে সব যানবাহন এই টানেল দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।
টানেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে টানেলের টোল পরিশোধ করে টানেল পারাপার শেষ করেন।
পরে তিনি আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
সেখানে লাখো মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আপনাদের জন্য আমি একটি বিশেষ উপহার নিয়ে এসেছি। এটি হল টানেল। এখন দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে। দক্ষিণ এশিয়ায় এত বড় আর টানেল নেই। আগামীকাল টানেল জনসাধারণ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রামের ভেতরে ঢুকে যানজট পড়তে হবে না। টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। যা আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। চায়না ইকোনমিক জোন হবে গহিরায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্রশস্তকরণ, মেট্রোরেল নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করছি। চাক্তাই কালুরঘাট মেরিন ড্রাইভের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ করে দেব। বে-টার্মিনাল করা হচ্ছে। মাতারবাড়িতে ডিপ সি-পোর্ট হচ্ছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। একাধিক পানি শোধনাগার করেছি। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়েছে। দ্বিতীয় রিফাইনারির কাজ চলছে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৩৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক, মিনি সেক্রেটারিয়েট করছি। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হবে। রাঙামাটি পর্যন্ত রেল লাইন করার চিন্তা আছে।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় পুনরায় ভোট প্রত্যাশা করে বলেন, ‘আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে কর্ণফুলী টানেল হয়েছে, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আমাদের আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না, হাত তুলে ওয়াদা করুন।’
জনগণ এ সময় সমস্বরে চিৎকার করে দুই হাত তুলে নৌকায় ভোটদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলসহ চট্টগ্রামে ১০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং দুটি প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ছয়টি উদ্যোগের উদ্বোধন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ১০৫ ফুট গভীরে নির্মিত। পতেঙ্গা নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে নদীর তলদেশে ১৪০ ফুট মাটির নিচে নির্মিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার হলেও এর সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। যা আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উঠেছে। যা সাড়ে তিন মিনিটে পাড়ি দেওয়া যাবে। ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
টানেলের দুই পাশের ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হাইওয়েকে যুক্ত করবে। তা ছাড়া টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি উড়াল সেতুও রয়েছে। টানেলে ১০ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের প্রতিটি টিউবের দূরত্ব অন্তত ১১ মিটার। দুই টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেনে চলাচল করবে যানবাহন। এসব টিউবের সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৬ মিটার। টিউবের ভেতরের উচ্চতা ১৬ ফুট। টানেলের উত্তর প্রান্ত চট্টগ্রাম নগরীর আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কাঠগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক, পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে সুরঙ্গ সড়কে প্রবেশ করা যাবে।
চীনা অর্থায়নে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পটির ঠিকাদার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাদের সঙ্গে ২০১৫ সালের ৩০ জুন চুক্তি হয়। পরে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
Discussion about this post