চট্টগ্রাম, ১১ নভেম্বর, ২০২৩:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ডুয়েলগেজ একক রেললাইন উদ্বোধন করেছেন যা বাংলাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আরেকটি মাইলফলক। শনিবার দুপুরে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন তিনি। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এ রুটে দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণাধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কক্সবাজার রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। রেলওয়ে উদ্বোধন করে আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটি এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। চাহিদা পূরণ হয়েছে। এটা গর্ববোধ করার দিন।
অনুষ্ঠানে রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রী একটি ট্রেনের পতাকা উড়িয়ে তারপর কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে রামু রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যাত্রা করেন। সেখান থেকে যান মহেশখালীর মাতারবাড়ী।
সেখানে বিকালে প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও এই সমুদ্রবন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেন।
এর আগে তিনি মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার জন্য ভোট চান জনগণের কাছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে চাইব- নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন, যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি।
সেখানে ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রেললাইন:
চট্টগ্রামকে কক্সবাজারের সাথে সংযোগকারী প্রথম রেলপথের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকোরিয়া, ডুলাহাজরা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া এবং গুমদুমে নয়টি স্টেশন রয়েছে।
এই স্টেশনগুলিতে সম্পূর্ণ কম্পিউটার-ভিত্তিক ইন্টারলকিং সিগন্যাল সিস্টেম এবং একটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮০৩৪.৪৭কোটি টাকা ব্যয়ে ফাস্ট ট্র্যাক মেগা রেলওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। আগামী মাসে নতুন রেললাইনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।
ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে এটি মিয়ানমার এবং তার বাইরেও অ্যাক্সেস উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়াসহ আটটি উপজেলা এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, রামু ও উখিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে যাবে।
লাইনটি দোহাজারী গ্রাম থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ দিকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে। প্রথম ২৯ কিলোমিটার অংশটি চট্টগ্রাম জেলার সমতল, খোলা জমি জুড়ে চলবে এবং পরবর্তী ৩৩ কিলোমিটার কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৃষি জমি এবং বনের মধ্য দিয়ে যাবে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে রেললাইন মাতারবাড়ি দ্বীপে নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে। বর্ধিত অংশে দুটি স্টেশন থাকবে—উখিয়া ও ঘুমধুম।
সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বকখালী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রামু ও কক্সবাজার এলাকায় ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেউচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং দুটি হাইওয়ে ক্রসিং রয়েছে।
Discussion about this post