চট্টগ্রাম, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪:
দেশের বাজারে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন না হওয়ায় চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। দুই দশকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে । ৫৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এখন চালু আছে মাত্র ২৪টি চিংড়ি রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানও এখন ব্যবসা পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
তবে ইতিমধ্যে ভেনামি চিংড়ির চাষ শুরু হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।২০২২ সালে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু কক্সবাজারের উখিয়ার এম কে হ্যাচারি; কলাতলী এলাকার নিরিবিলি হ্যাচারি ও খুরুশকুল এলাকার মিডওয়ে সাইন্টফিক ফিসারিজ লিমিটেড ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে ডাফা ফিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড। এর আগে খুলনায় একটি পরীক্ষামূলক ভেনামি চিংড়ির চাষ শুরু হয়েছিল।
মূলত দেশি গলদা বা বাগদা চিংড়ির চেয়ে বিদেশে ভেনামি চিংড়ির চাহিদা্র প্রেক্ষিতে দেশে চিংড়ি রপ্তানীকারকরা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টি চালু থাকলেও বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে আরো কয়েকটি।
চিংড়ি রপ্তানীকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশে বাংলাদেশে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন না হওয়ায় অন্যান্য চিংড়ির রফতানি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকতে পারেননি।
বর্তমানে ভেনামি চিংড়ির চাষ হচ্ছে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, একুয়েডর, মেক্সিকো সহ বিভিন্ন দেশে ।
ভেনামি চিংড়ি একটি উচ্চফলনশীল চিংড়ি। এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি চিংড়ি প্রজাতি। উচ্চ ফলনের পাশাপাশি এর রোগ প্রতিরোধক্ষমতার জন্যও এটি এখন সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে উৎপাদিত চিংড়ির ৮০ শতাংশই ভেনামি জাতের। বাংলাদেশে ২০১৯ সাল থেকে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়। এজন্য চার বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সাল থেকে দেশে ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিদেশে যে চিংড়ির চাহিদা রয়েছে তার ৮০ শতাংশই ভেনামি চিংড়ি।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো থাকলেও খাদ্যাভ্যাস ও আবহাওয়া বিবেচনায় এ চিংড়ি চাষের ঝুঁকি একটু বেশি। ফলে ভেনামি চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনায় জৈব নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হয়।
তথ্যমতে, দেশের প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ হেক্টরে চাষ হয় বাগদা চিংড়ির। যেখানে বাগদা হ্যাচারি ৫০টি ও গলদার হ্যাচারি রয়েছে ৩৯টি।২০২১-২২ অর্থবছরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৭২ হাজার ৮০৯ টন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রফতানি হয়েছে ২১৫ মিলিয়ন ডলার। যেখানে এই সময়সীমার মধ্যে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২৮ মিলিয়ন ডলার।
মৎস্য রপ্তানীকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশে চিংড়ির চাহিদা পূরণ করতে না পারায় তারা ক্রমশ ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
Discussion about this post