চট্টগ্রাম, ১৭ নভেম্বর, ২০২১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনে অংশ গ্রহণের জন্য ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ড যান। পাশাপাশি ইউরোপে কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানদের সাথে উচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সম্মেলনে অংশ নেন। ৩১ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধানিমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের ব্যাপারে জানাতে আজ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি তার নিজস্ব ধরনে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন।
এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না।
উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কত টাকা ভর্তুকি দেব?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোনো শ্রেণিপেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি।
তিনি বলেন, “আমাদের উপায়টা কী? উপার্জনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপারমারকেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই।
কর না দেওয়া এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেওয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ব্যাপারে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার প্রতি আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু দেখিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি না? আপনাকে যদি কেউ হত্যা করার চেষ্টা করত আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বা আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত সেই হত্যাকারীদের বিচার না করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত তাদের জন্য আপনি কী করতেন?
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি করে করে এই দেশটাকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। গ্রেনেড হামলায় ২২ জন লোক মারা গেছে, একদিন পার্লামেন্টে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে দেয়নি। এতো বড় অমানবিক যে তাকেই আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার সেটুকু দেখিয়েছি। আর কতো চান? এখন সে অসুস্থ। ওই যে বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে… সেটাই মনে করে বসে থাকেন। আমার যেটা করার ছিল করে দিয়েছি।’
জলবায়ু সম্মেলনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের কপ সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হচ্ছে বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা প্যারিস চুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়সহ জলবায়ু অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করতে একমত হন। বাংলাদেশসহ ১৪১টি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের অরণ্য নিধন রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব নেতৃত্বকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, বিবিসি সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে আমাকে কপ-২৬ সম্মেলনের ৫ জন শীর্ষ ডিল মেকারের একজন হিসেবে চিহ্নিত করে। একে আমি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, আমাদের নৈতিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা হিসেবে বিবেচনা করে সম্মানিত বোধ করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন গত ১৪ নভেম্বর দেশে ফেরার পর আজ বুধবার, ১৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সূত্র: দৈনিক কালেরকণ্ঠ, বিডিনিউজ, দৈনিক সমকাল