রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার বিচারের রায় প্রদানকারী ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর ওই মামলার রায় ঘোষণার পর্যবেক্ষণে তিনি ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার কথা বলে ব্যাপক সমালোচিত হন। বিচারক কামরুন্নাহারের এই বক্তব্য সংবিধানের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিভিন্ন মানবাধিকার নেতা এবং আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান রোববার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহারের তথ্য জানান। একই সাথে ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এই বিচারককে রোববার সকাল থেকে আর আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
“তার বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে অদ্য ৯টা ৩০ ঘটিকায় আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।”
২০১৭ সালের ৬ মে ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাকে ধর্ষণ করার অভিযোগে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে তাকে এবং আরেক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার মামলায় আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ সহ সাফাতের দুই বন্ধু এবং দেহরক্ষী ও গাড়িচালক। তাদের মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে। অন্যরা সহযোগিতাকারী। ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে ৪ বছর পর মামলার রায় দেন বিচারক কামরুন্নাহার। রায়ে অভিযোগ ‘প্রমাণিত হয়নি’ সিদ্ধান্ত দিয়ে সব আসামিকে খালাস দেন বিচারক।
বিচারক কামরুন্নাহার বলেছিলেন, অভিযোগকারী তরুণী ‘স্বেচ্ছায়’ রেইনট্রি হোটেলে গিয়ে আসামির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, সেখানে ‘ধর্ষণ ঘটেনি’। তদন্ত কর্মকর্তা ‘প্রভাবিত হয়ে’ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা না হলে পুলিশকে ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়ে পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, “৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।”
তার পর্যবেক্ষণের বক্তব্যে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে গতকাল শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, একটি কথা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি ওনার (বিচারক) রায়ের বিষয়বস্তু নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। কিন্তু ওনার (বিচারক) অবজারভেশনে ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশ যেন কোনো ধর্ষণ মামলার এজাহার না নেয়, এই যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। এ কারণে আমি আগামীকাল (রোববার) প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন নিয়ে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে জন্য একটা চিঠি লিখছি। কাল (রোববার) চিঠি দেওয়া হবে।
সূত্র: বিডিনিউজ ও দৈনিক প্রথম আলো
Discussion about this post