চট্টগ্রাম,২৪ এপ্রিল, ২০২৫:
২৫ এপ্রিল ১৩৮ তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে প্রতি বছর দিনটি পালন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ । এ উপলক্ষে প্রথা অনুযায়ী আজ দুপুরে চবকের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের নানা অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে এ বছর ২৫ মার্চের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের রপ্তানি আয় ১১.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থ বছরের নয় মাসে ৩৭১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ৯ মাসে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গত বছরের নয় মাসের চেয়ে ৫.০১ শতাংশ বেড়েছে, কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.৯৬ শতাংশ। জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০৫৮টি। সরকারি পত্র ও নথি আদানপ্রদানের ৮০℅কাজ ডি নথি পদ্ধতিতে সম্পন্ন হচ্ছে। সরকারি ক্রয় সম্পাদনে ইজিপি-তে সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কন্টেইনার ইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে নতুন নতুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা সংরক্ষণে উভয় তীর সংরক্ষণে ২৮৫০ মিটার তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে যন্ত্রপাতির কোনো স্বল্পতা নেই। তথাপি ২০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ১২ টি মোবাইল ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছে। দুটি হেভি ট্রাক্টর ও ২ টি লো বেড ট্রেইলার ক্রয়ের এলসি খোলা হয়েছে। দুটি আধুনিক প্রযুক্তির সার্ভে জাহাজ ক্রয় করা হবে। ব্যাথিমেট্রিক সার্ভের জন্য একটি মাল্টিবিম ইকোসাউন্ডার সংগ্রহ করা হয়েছে। কর্ণফুলি নদীতে ৯.৬০ লক্ষ ঘনমিটার সংরক্ষণ ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের গেম চেঞ্জিং অর্জন হবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বেটার্মিনাল। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ২৯ এবং বে টার্মিনাল ৩১ সালে সম্পন্ন হবে।
এতে চট্টগ্রাম বন্দরের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য কমোডর কাওসার রশিদ,
ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যা বললেন চেয়ারম্যান: আধুনিক বিশ্বে দক্ষ বন্দর ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি অংশীদারিত্বের বিষয়টি একটি দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব ভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআই-কে সম্পৃক্ত করেছে। আমরা বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় টার্মিনাল অপারেটর এপিএম এর সাথে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে নিয়োজিত ট্রানজেকশন এডভাইজার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আশা করা যায় আগামী ছয় মাসের মধ্যে কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে। এছাড়াও এনসিটি
টার্মিনালটি একটি স্বয়ং সংম্পূর্ণ অপারেশনাল টার্মিনাল হওয়ায় তা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য লাভজনক হবে কিনা এবং এর ফলে বাংলাদেশের বন্দর পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে ট্রানজেকশন এডভাইজার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বে-টার্মিনালের কন্টেইনার টার্মিনাল-১ এবং কন্টেইনার টার্মিনাল-১ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিংগাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২০ এপ্রিল বে-টার্মিনালের ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া, গতকাল বে টার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্প আগামী ২০২৯-২০৩০ সালের মধ্যে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে।।
দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার খ্যাত মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ-১ (২টি জেটি নির্মাণ) এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্ঠান পেন্টাওশান কন্সট্রাকশান কোম্পানি ও টোয়া কর্পোরেশনের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর গত ২২ এপ্রিল সম্পন্ন হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে বলে আশা করা যায়। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে Regional Transshipment Hub হিসাবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসাবে জাইকা’র সহযোগিতায় বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পটির ২য় সংশোধিত ডিপিপি গত ০৭/১০/২০২৪ তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় সিভিল, ড্রেজিং, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি এবং জাহাজসমূহ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি ক্রয় চুক্তি ইতোমধ্যে সম্পাদিত হয়েছে এবং সিভিল ও ড্রেজিং কার্যক্রমের চুক্তি অতিশিঘ্রই সম্পাদিত হবে এবং নির্মাণ কার্যক্রম অতিদ্রুত শুরু করা হবে। দেশে জ্বালানি সমস্যা দ্রুততম সময়ে সমাধানের লক্ষ্যে Land Based LNG Terminal স্থাপনের নিমিত্ত মাতারবাড়ি বন্দরের ১ম ধাপের ২য় পর্যায়কে ১ম পর্যায়ের সাথে সংযুক্ত করে ফাস্ট ট্র্যাকিং করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এ লক্ষ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২য় পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে ৬১২ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার বরাবরে দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া, সম্প্রতি UAE, জাপান এবং সিঙ্গাপুরের দূতাবাসসমূহের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিদলের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক এবং সফরে প্রতিনিধিদল মাতারবাড়ি-মহেশখালী এলাকায় বিভিন্ন Maritime Infrastructure সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের তথ্যাদি সংগ্রহ করেন এবং মেরিটাইম সিকিউরিটি,
পরিবেশ সংরক্ষণ, শিপ ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়াওসম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলার কথা আলোচিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ কোম্পানি ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জেবেল আলি বন্দরকে ঘিরে একটি ‘ফ্রি ট্রেড জোন’ পরিচালনা করে। কোম্পানিটির কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশেও সেরকম অঞ্চল তৈরির কার্যক্রম হাতে নিবে।
Discussion about this post