চট্টগ্রাম, ৫ মে, ২০২৫:
মালাক্কা প্রণালির মাধ্যমে চীনকে প্রতিহত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যাতে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে যুদ্ধকালীন চীনের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করা যাবে। এমন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে একক আধিপত্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর।
মালাক্কা প্রণালীর অবস্থান: উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মালয় উপদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ ৮০৫ কিমি (৫০০ মা) সমুদ্রপ্রণালি।মালাক্কা প্রণালির উত্তরে ভারত মহাসাগরের আন্দামান সাগরকে দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ চীন সাগরের সাথে যুক্ত করেছে এবং মালয় উপদ্বীপকে সুমাত্রা দ্বীপ থেকে পৃথক করেছে। প্রণালিটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর বিস্তার ৬০ কিলোমিটার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার হতে পারে। প্রণালিটির দক্ষিণ প্রান্তে অনেকগুলি দ্বীপ আছে। এই প্রণালিটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজগামী সমুদ্রপথের একটি, ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সমুদ্র বাণিজ্য এর মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়। মালাক্কা প্রণালির উপকূলে অবস্থিত প্রধান বন্দরগুলির মধ্যে আছে মালয় উপদ্বীপের পেনাং (প্রাক্তন জর্জটাউন), পোর্ট সোয়েটেনহাম ও মালাক্কা, এবং সুমাত্রা দ্বীপের বেলাওয়ান বন্দর। সিঙ্গাপুর এই প্রণালির দক্ষিণতম প্রান্তে অবস্থিত।
এ প্রণালিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তি হয়েছে। আবার ফিলিপিন্সে নতুন করে কয়েকটি ঘাঁটি করে সেখানে বিমান, নৌ ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হলো আরকান উপকূল থেকে মালাক্কা প্রণালী ও এর আশেপাশের এলাকায় চীনের বিপরীতে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলা।
মালাক্কা প্রণালি দিয়েই চীনের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি ও উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে জ্বালানি আমদানি হয়ে থাকে, যা চীনের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে।
মালাক্কা প্রণালিটি চীনের জন্য আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছানোর সবচেয়ে ছোট পথ।
এদিকে রাখাইনের পাইপলাইনের মাধ্যমে আবুধাবি, ইরাক, ইরান ও সৌদি আরব থেকে তেল দ্রুত ও নিরাপদে চীনে পৌঁছাতে সক্ষম।
বিশ্লেষকদের অভিমত, এ এলাকাকে বিবেচনায় নিয়ে সিঙ্গাপুরে নৌ ঘাঁটি করে লিটরেল কমব্যাট শিপ মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনী। মালাক্কা ও আশেপাশের প্রণালি বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরের মধ্যকার এলাকাটি নিয়ন্ত্রণই তাদের মূল উদ্দেশ্য, যাতে করে কখনো প্রয়োজন হলে চীনের জাহাজ চলাচলই বন্ধ করে দেয়া যায়।
এজন্য রাখাইনের সাথে সরাসরি পাইপলাইন তৈরি করেছে চীন। মিয়ানমারের বঙ্গোপসাগর-তীরবর্তী প্রদেশটিতে কানেক্টিভিটি ও জ্বালানি খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে চীনের।
রাখাইনে পাইপলাইন নির্মাণের আরেকটি ভূকৌশলগত কারণ, বাণিজ্য পরিচালনায় এটি চীনের জন্য মালাক্কা প্রণালীর বিকল্প পথ হিসেব কাজ করবে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাখাইনে বঙ্গোপসাগরের তীরে চীন নির্মাণ করছে কিয়াউকফু বন্দর। এটিকে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে রেল ও সড়কপথে।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে রাখাইনের অবস্থান। এর আয়তন প্রায় ৩৬ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার। রাখাইন প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে এতটাই সমৃদ্ধ এবং এর কৌশলগত অবস্থান এত গুরুত্বপূর্ণ যে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সব শক্তিরই লোভনীয় দৃষ্টি রয়েছে এখানে।
Discussion about this post