৩০ ডিসেম্বর, ২০২১:
মহামারি করোনার ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারতের কয়েকটি রাজ্য। সংক্রমণ ঠেকাতে ইতিমধ্যে মুম্বাইয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করেও পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এখনই কিছু বন্ধ হবে না। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ভারতের এমন অনেক মানুষ ওমিক্রন আক্রান্ত হচ্ছে যাদের বিদেশ যাবার কোন তথ্য নেই। ওমিক্রন এ রকম আশংকাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে তোড়জোর চলছে।
এ ব্যাপারে বুধবার গঙ্গাসাগরে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি রাজ্যের শীর্ষস্তরের আমলাদের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার নির্দেশ দেন। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলার প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে মমতার সরকার।
এই পরিস্থিতিতেই বুধবার বৈঠকে বসেছিলেন পশ্চিম বঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। তৃতীয় ঢেউ এলে কী ভাবে মোকাবেলা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেই বৈঠকে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক ২০ হাজার সংক্রমণের সাক্ষিও থেকেছে রাজ্যটি। তৃতীয় ঢেউয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেখানে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ এবং অক্সিজেন মজুত রাখার নির্দেশও হাসপাতালগুলিকে দেওয়া হয়েছে। মে-এপ্রিল মাস পর্যন্ত হাসপাতালগুলোকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী কয়েক দিনে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কতটা বাড়তে পারে তা নিয়েও আলোচনা চালিয়েছেন উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা। সেই সঙ্গে কলকাতা সহ জেলাতেও করোনা পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতার আশপাশের অঞ্চলে কেউ কোভিড আক্রান্ত হলে, তাদের সকলের জিন পরীক্ষার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওমিক্রনে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কি না তা দেখার জন্যই এই পদক্ষেপ।
পশ্চিম বঙ্গে সোমবার সংক্রমণের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪০০-এর কম। বুধবার তা পৌঁছে গিয়েছে ১১ শতের কাছাকছি। এর মধ্যেই হানা দেয় করোনার ওমিক্রন। বিদেশযাত্রার ইতিহাস নেই রাজ্যে এ রকম ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হয়েছেন ওমিক্রনে। যদি সংক্রমণ মাত্রা ছাড়িয়ে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয় তা সামাল দিতেই প্রস্তুতি নিচ্ছে মমতার সরকার।
এ বছর মে মাসে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় রাজ্যটিতে কোভিড সংক্রমণ ২০ হাজার ছাড়িয়েছিল।
কিন্তু গত দু’দিনে তা লাফিয়ে বেড়ে এক হাজার ছাড়াতেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কপালে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট ১১ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত। তাদের অনেকেরই সাম্প্রতিক কালে বিদেশযাত্রার ইতিহাস নেই।
এদিকে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে আবার করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শহরটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার। গতকাল বুধবার শুধু মুম্বাইয়ে ২ হাজার ৪৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। গোটা রাজ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয় ৩৮ জনের। তাদের কেউই সম্প্রতি বিদেশ ফেরত নন।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মহারাষ্ট্র সরকার ৩০ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মুম্বাইয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। সরকার বলেছে, এবার নতুন বছর উপলক্ষে মুম্বাইয়ে কোনো পার্টির আয়োজন করা যাবে না। অর্থাৎ রেস্তোরাঁ, পাব, আবাসিক হোটেল, পানশালা, ক্লাব ও রিসোর্টগুলোয় জনসমাগম করা যাবে না।
মুম্বাইয়ে হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ায় রাজ্য সরকার বেশ উদ্বিগ্ন। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে বলেছেন, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ভয়ংকর গতিতে বাড়ছে। এখন শনাক্তের হার ৪%। এটা ৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকলে দিল্লির মতো নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। তাই সবাইকে আরও বেশি সাবধান হতে হবে। এছাড়া বিয়ে বা অন্য কোনো জনসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে।
নতুন বছর উপলক্ষে জনসমাগম ঠেকাতে গতকাল কোভিড-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ জারি করে রাজ্য সরকার।
যারা নিয়ম মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন মহারাষ্ট্রের পরিবেশমন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে। তবে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ে করোনা শনাক্তের হার বাড়লেও বেশির ভাগ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হচ্ছে না। গত সপ্তাহে আক্রান্ত ৩৫৪ জনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। আক্রান্ত ৩৫৪ জনের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।