চট্টগ্রাম, ৩ মার্চ, ২০২২:
ইউক্রেনের বন্দরে নোঙর করা বাংলাদেশী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। যে কোনো সময় তারা মিসাইল হামলার শিকার হবার আশঙ্কা করছেন।
রাশিয়ার রকেট হামলায় এক নাবিকের মৃত্যুর ৪ দিন পরও জীবন বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকরা রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে দেশে নাবিকদের মা-বাবারাও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ইউক্রেনের বন্দর অলভিয়ায় আটকে পড়া তাদের পরিবারের পরিবারের সদস্যদের ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। যাদের জন্য চরম উৎকণ্ঠায় আছেন নাবিকদের মা-বাবা ও স্বজন-পরিজন।
বিএসসির ওই জাহাজে গত বুধবার রাশিয়ার রকেট হামলায় জাহাজের ব্রিজে থাকা জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান। জাহাজে বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরেই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে হাদিসুর নিহত হন। এখন জাহাজটিতে ২ জন মহিলা ক্রু সহ ২৮ জন নাবিক আটকে আছেন। যদিও জাহাজে প্রায় এক মাসের খাদ্য ও পানীয় সহ কিছু মজুদ আছে।
এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মৃত হাদিসুরের মরদেহ আমাদের হেফাজতে আছে। আমরা হাদিসুরের পরিবারের পাশে দাঁড়াব। যারা জীবিত আছেন তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, নাবিকদের নিরাপত্তাই প্রথম কথা। জাহাজের ক্রুদের আতঙ্কিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন আছেন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনও ওই ২৮ নাবিককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। বিএসসির নির্বাহী পরিচালক পীযুষ দত্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তাদের নিরাপদে, সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডিজি শিপিং সকলে চেষ্টা করছেন তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে। এজন্য কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সিকিউরিটির নিশ্চয়তা না পেলে তাদের জাহাজ থেকে আপাতত তীরে নিয়ে আসার সুযোগ নেই।
বাংলার সমৃদ্ধর চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন সংবাদমাধ্য মকে মিসাইল হামলার আশঙ্কা করছেন। তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের বাঙ্কারে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে বুধবার ফেব্রুয়ারি হাদিসুরের নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশের রুশ দূতাবাস।
গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারিেইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আটকে পড়া বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে আটকে পড়েছেন সীতাকু-ের ভাটিয়ারির সালমান সরোয়ার সামি (২৬)। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত আছেন সামি। যুদ্ধ লাগার পর থেকে পরিবার দুশ্চিন্তায় ছিল। তবে গত বুধবার বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান নামে অপর এক ইঞ্জিনিয়ার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হওয়ার পর পরিবারের উৎকণ্ঠা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। তিনি উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ভাটিয়ারি গ্রামের মাহফুজুল হক ও ভাটিয়ারি টিএসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা ছেমন আরা বেগমের পুত্র । আটকেপড়া জাহাজে থাকা সব বাংলাদেশিদের নিরাপদে দেশে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানান তার পরিবার।
সালমান সরোয়ার সামির মা জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সালমান সরোয়ার চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বাংলার সমৃদ্ধিতে যোগ দেন। গত বুধবার রাত ১০টায় ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। এ সময় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জাহাজটির তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার মারা গেলেও বাকিরা অক্ষত আছেন বলে মোবাইলে সামি আমাকে বলেন। কিন্তু এরপর আর ছেলের সাথে যোগাযোগ হয়নি। আমার ছেলের মতো মোট ২৮ জন বাংলাদেশি ইউক্রেনের বন্দরে ‘বাংলার সমৃদ্ধিতে’ আটকা পড়েছেন। অজানা উদ্বেগ ও আশংকায় আমাদের বিনিদ্র রাত কাটছে। আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দ্রুত উদ্ধারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। ছবি: অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা
Discussion about this post