চট্টগ্রাম, ২২ মে, ২০২২:
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ নিয়ে লড়াই জমে উঠেছে। সভাপতি পদে দুই প্রতিদ্বন্দ্বির লড়াই হবে। দীপঙ্কর আর নিখিলের মধ্যে। ২৬ বছর পর এই প্রথম দীপঙ্কর তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদেও দুই পক্ষে তুমুল লড়াই হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে যার যার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলন ঘিরে তাই নেতাকর্মীরা সবাই উজ্জীবিত। শহর ও জেলা জুড়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনা। সম্মেলনে যোগ দিতে প্রস্তুত জেলা, উপজেলাসহ তৃণমুলের নেতাকর্মীরা। কারণ এবার সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হবে। এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় টানা ২৬ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীপংকর তালুকদার এমপি। একাধারে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে রাঙামাটির আসনে সংসদ সদস্য পদে এককভাবে দলীয় প্রার্থীও হয়ে আসছিলেন তিনি। ১৯৯১ সাল থেকে গত ছয়টি জাতীয় নির্বাচনে হেরেছেন দুইবার। জিতেছেন ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে। হেরেছেন ২০০১ সালে বিএনপির মণিস্বপন দেওয়ান এবং ২০১৪ সালে জনসংহতি সমিতির ঊষাতন তালুকদারের কাছে। তিনি দলীয় পদবিতে জেলা সভাপতির পাশাপাশি দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিরও সদস্য। এছাড়া বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও।
দলটির নেতাকর্মী অনেকের ভাষ্য- একজনের কাছে এতগুলো ক্ষমতা রেখে দিলে অন্যরা কী করবেন। তাছাড়া দীর্ঘদিনের টানা নেতৃত্বে ক্ষমতার দাপট আর অহংকার বাড়িয়েছে। এতে দলীয় সবকিছুর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এককভাবে। ফলে বঞ্চনার শিকার দলের বড় অংশের সাধারণ নেতাকর্মীরা। এতবড় দল এত নেতাকর্মী- কিন্তু দলীয় কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই একই ব্যক্তি যাকে খুশি তাকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য নিয়োগ দিচ্ছেন। এসব পদে কেউ কেউ টানা তিন দফা মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে তারা বেপরোয়াভাবে টেন্ডার ভাগাভাগি, চাকরিতে নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি স্বজনপ্রীতিতে জড়িত হচ্ছেন। এসবের বদৌলতে ক্ষুণœ হতে চলেছে দলের ভাবমূর্তি। যে কারণে দলের ভেতর এখন ক্ষোভের প্রকাশ পাচ্ছে। তাই দলটির রাঙামাটির অবস্থান আর আগের মতো নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী এখন নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে। যার প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে এবার সম্মেলনে।
সূত্র জানায়, অধিকাংশই কাউন্সিলরের প্রস্তাবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি প্রকাশ্য করেছেন বর্তমান সহ-সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। তিনি সম্মেলনে চ্যালেঞ্জ জানাবেন টানা ২৬ বছর ক্ষমতায় থাকা দীপংকরকে। ফলে শেষ পর্যন্ত দীপংকরকে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এত বছর পর এভাবে হঠাৎ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়ে পড়ায় দীপংকরের চোখে এখন যেন সর্ষেফুল। ইতোমধ্যে দীপংকরের পক্ষে তাকে আরেকবার সুযোগ দিতে নিখিলকে বসে থাকার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু যে কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখেও তাতে কোনো ছাড় নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিখিল ও তার সমর্থকরা।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে- এর একমাত্র সিদ্ধান্ত হবে ভোটে। শেষ মুহূর্তে কাউন্সিলরদের কাছে ছুটছেন সভাপতি প্রার্থী দীপংকর ও নিখিল। দৌঁড়াদৌঁড়ির তোড়জোরে রয়েছেন সম্পাদক প্রার্থী বর্তমান দায়িত্বে থাকা মো. মুছা মাতব্বর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন। মুছা- দীপংকর প্যানেলে আর কামাল- নিখিলের প্যানেলে। বিভাজনে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় অংশটি নিখিল প্যানেলে এবং অপর অংশসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অধিক নেতাকর্মী দীপংকর প্যানেলে অবস্থান নিয়েছে বলে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র মতে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটি পদেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সম্পাদক প্রার্থী হাজি মুছা মাতব্বর বর্তমান দায়িত্বের পাশাপাশি জেলা পরিষদের সদস্য এবং হাজি কামাল উদ্দিন বর্তমানে সহ-সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য।
এসব বিষয়ে দীপংকর তালুকদার বলেন, কে কোন পদে কতজন প্রার্থী হবেন- তা সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেখা যাবে। একাধিক প্রার্থী হওয়া গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক। এটা খারাপের বিষয় না। এতে দলও শক্তিশালী হয়। আমাদের আসল লক্ষ্য- সম্মেলন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করা। আমাদের প্রস্তুতি শেষ। আবহাওয়া ভালো থাকলেও আর কোনো কিছুর বাত্যয় ঘটবে না।
অপর সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছি। কারও কোনো অনুরোধে বসাবসি নেই। সেই সময়টা এখন নেই। অনেক আগে তা চলে গেছে। হারজিত হবে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে। জয় নিয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমি নির্বাচিত হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলকে সুসংহত ও সুসংগঠিত করতে আপ্রাণ চেষ্টায় থাকব।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের এবারের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে দীর্ঘ ১০ বছর পর। এর সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এ সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা আসতে না পারায় তা স্থগিত রাখতে হয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারি বিস্তারের কারণে সম্মেলন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। দেখা যায়, প্রতিবারই এ জেলা আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ৮/১০ বছর অন্তর। ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সম্মেলন হয়েছিল ২০০২ সালের ৪ নভেম্বর। এর পরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তার পরবর্তী ১০ বছর অন্তর হচ্ছে এবার সম্মেলন। এবার কাউন্সিলর ২৪৬ জন।
Discussion about this post