চট্টগ্রাম, ২২ মে, ২০২২:
সরকার গ্রাম আদালত সক্রিয় করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করলেও এই আদালত কতটা সক্রিয় আসলে তা সাধারণ মানুষ অবগত নয়। যে কারণে গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। গতকাল ২২ মে, রোববার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের অগ্রগতি ও পরিচালনা দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতির বক্তব্যে সক্রিয় না থাকার কারণ উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) বদিউল আলম বলেছেন, ইউপি সচিবগণ আরও আন্তরিক হলে গ্রাম আদালতের সার্বিক কার্যক্রম বেগবান হবে। বিভিন্ন কারণে মানুষ গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান থাকলেও তা সঠিকভাবে তদারকি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত ছক অনুযাযী অবহিত না করার কারণে কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিরা কোন এক পক্ষের হয়ে কাজ করেন বলেই বিচার প্রার্থীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি দেখে ন্যায় বিচার করলে গ্রাম আদালতে গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে।
এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত কতটা সক্রিয়। অথচ প্রথম পর্যায়ে ২০০৯-২০১৫ মেয়াদে ৩৫১টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। উক্ত প্রকল্পের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও সাফল্যকে সামনে রেখে পরবর্তীতে ২০১৬-২০২২ মেয়াদে ৮টি বিভাগের ২৭টি জেলার ১০৮০টি ইউনিয়নে ‘বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয় যা এ জেলায় ৫টি (সীতাকুন্ড, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, ফটিকছড়ি ও সন্দ্বীপ) উপজেলার ৪৬টি ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু যেখানে প্রকল্প শেষ হচ্ছে সেগুলোর অবস্থা কী।
সভায় জানানো হয়, দেশের আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার উপর চাপ কমাতে এবং দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির সহজে, কম খরচে, স্বল্প সময়ে, সঠিক বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালের গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ ফলপ্রসূ করার জন্য কিছু সংশোধনীসহ ২০০৬ সালে অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করা হয়, ২০১৩ সালে আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হয় এবং সবশেষে ২০১৬ সালে গ্রাম আদালত বিধিমালা প্রণীত হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সভাটির আয়োজন করে। সভায় সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউএনডিপি প্রতিনিধি, প্রকল্পভুক্ত এলাকার ইউপি সচিবগণ অংশগ্রহণ করেন। সভায় মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গ্রাম আদালত কার্যক্রম বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।
বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন (সীতাকুন্ড), মোঃ সাব্বির রাহমান সানি (ফটিকছড়ি), ফাতেমা-তুজ জোহরা (সাতকানিয়া) ও মোঃ শরীফ উল্যাহ (লোহাগাড়া)।
সভায় আরও জানানো হয়, বিভিন্ন কারণে দেশে বিচারিক আদালতে মামলার বিরাট জট তৈরি হয়েছে, যদি দেশে গ্রাম আদালত কার্যক্রম সক্রিয় করা সম্ভব হয় তবে মামলার জট নিরসনের পাশাপাশি অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষজন বিচারিক সেবা পাবেন, এতে করে সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকবে এবং মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে। এজন্য ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিবদের মধ্যে সুসমন্বয় গড়ে তোলা এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের আহ্বান জানানো হয়।
Discussion about this post