চট্টগ্রাম, ১৯ জুলাই, ২০২২:
জাপানের কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডকে নিরাপত্তা ত্রুটি বলে মনে করছেন জাপান ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে ভিআইপি রাজনীতিবিদদের দেহরক্ষীর দায়িত্বে থাকা টোকিও পুলিশ নারা পুলিশের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। খবর রয়টার্সের
মাত্র ২.৫ সেকেন্ড সময়ের সাথে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের দেহরক্ষীরা লড়াই করতে পারলে তাকে দ্বিতীয় গুলি থেকে বাঁচানো যেত। শিনজো আবের হত্যাকারীর প্রথম গুলির সাথে দ্বিতীয় গুলির সময়ের পার্থক্য ছিল মাত্র আড়াই সেকেন্ড। এই আড়াই সেকেন্ড সময় শিনজো আবের দেহ রক্ষীরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। জাপানের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই মতামত দিয়েছেন।
জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সহ সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তার ত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন।
স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর তত্ত্বাবধানকারী ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি বলেছে যে- আবেকে হত্যা করা হচ্ছে পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার ফল। এজন্য জাপান পুলিশ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করার জন্য একটি টিম গঠন করেছে এবং যাতে এই ধরনের গুরুতর ঘটনা প্রতিরোধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারে।
জাপানের নারা শহরে গত ৪ জুলাই একটি নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তাকে গুলি করে এক হত্যাকারী। তার প্রথম গুলিটি ব্যর্থ হলেও আড়াই সেকেন্ডের ব্যবধানে আবেকে দ্বিতীয় গুলিটি করে ওই হত্যাকারী।
জাপানে আবের হত্যাকাণ্ড বিশ্বকে হতবাক করেছে । কারণ জাপানে বন্দুক সহিংসতা বিরল ঘটনা। যে কারণে রাজনীতিবিদরা সাধারণ নিরাপত্তার মধ্যে জনসাধারণের কাছাকাছি গিয়ে প্রচারণা চালান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ঘটনাস্থলে ছয়জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলেছে এবং আবেকে গুলি করার আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ একত্রিত করে একাধিক ভিডিও পরীক্ষা করেছে।
৬৭ বছর বয়সী আবেকে একটি পাবলিক রাস্তায় একটি ট্রাফিক আইল্যান্ডে বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে তেতসুয়া ইয়ামাগামি( ৪১) নামে নৌবাহিনীর এক প্রাক্তন সেনা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সময় জো বিডেনকে নিরাপত্তা প্রদানকারী গ্লোবাল থ্রেট সলিউশনের প্রধান কেনেথ বোম্বাস বলেছেন, আক্রমণকারী আবের পিছনের দিকে খুব স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গেছে। যখন আবের নিরাপত্তা রক্ষীদের হস্তক্ষেপ করা দরকার ছিল।
এ রকম পরিস্থিতিতে ভিড়ের মধ্যে নিরাপত্তা রক্ষীদের কোনো রকমের নজরদারি ছিল না।
ইয়ামাগামি তার প্রথম গুলি চালানোর আগে আবের প্রায় ৭মিটারের (২৩ ফুট) মধ্যে এসেছিলেন, যেটি মিস হয়েছিল। আর হত্যাকারী দ্বিতীয় গুলিটি ছুড়েছিলেন প্রায় ৫ মিটার দূর থেকে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, প্রথম গুলি করার পর আবে ঘুরে তার বাম কাঁধের দিকে তাকায়। দুই দেহরক্ষী তার এবং বন্দুকধারীর মাঝখানে যাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে,একজন একটি পাতলা কালো ব্যাগ উত্তোলন করে। অন্য দু’জন শুটারের দিকে এগিয়ে যায়, আর সুযোগ বুঝে ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে কাছাকাছি চলে আসে হত্যাকারী।
যদিও আবের নিরাপত্তা টিম হামলাকারীকে মোকাবেলা করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে, কিন্তু আবের নিরাপত্তার জন্য শুটারের পিছনে যাওয়া ভুল সিদ্ধান্ত বলে মত দেন নিহন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মিৎসুরু ফুকুদা, যিনি সংকট ব্যবস্থাপনা এবং সন্ত্রাসবাদে বিশেষজ্ঞ।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তৃতা করতে এগিয়ে আসেন, তখন ভিডিও ফুটেজে ইয়ামাগামিকে হাততালি দিতে দেখা যায়। ইয়ামাগামি আবের পিছনে হেঁটে যাওয়ার সময়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
এ রকম অবস্থায় আবের একজন নিবেদিতপ্রাণ সুরক্ষা দেহরক্ষী থাকা উচিত ছিল। জাপানের এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এক বা দুই সেকেন্ডের মধ্যে আবের কাছে পৌঁছানোর মতো পরিস্থিতি হত তাহলে বিষয়টা অন্যরকম হতো। নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রথম শটটি বন্ধ করতে পারত যদি তারা সতর্ক থাকত এবং দ্বিতীয় শটের আগে একটি দুই-সেকেন্ডের বেশি উইন্ডো ছিল, তাই তারা অবশ্যই এটি প্রতিরোধ করতে পারত যদি সতর্ক থাকত।