চট্টগ্রাম, ২৪ আগস্ট, ২০২২:
চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ বসবাসকারী ও প্রশাসন এখন মুখোমুখি অবস্থানে। প্রশাসনকে অমান্য করে সলিমপুরে বসবাসকারীরা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করছে।
ইতিমধ্যে পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ, দাঙ্গার উদ্দেশ্যে লাঠি-সোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি ভাঙচুর পূর্বক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করা ও মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপরাধে সীতাকু- মডেল থানা পুলিশ জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করেছে।
জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকার অবৈধ বসবাসকারীদের বসতঘর ও দোকান উচ্ছেদ ও বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এসময়ফৌজদারহাট ট্রাফিক বক্সের সামনে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট ও বন্দর টোল রোড সংযোগ সড়কের চৌরাস্তায় অবরোধ করার ঘটনায় তিনটি মামলার বাদি সীতাকু- মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান ও জঙ্গল সলিমপুর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড ৪নং ব্রিজের পশ্চিম পাশে সড়কের উপর অবরোধের ঘটনায় তিনটি মামলার বাদি সীতাকু- মডেল থানার উপ-পরিদর্শক পারসিত চাকমা।
মোট ৬টি মামলায় আসামি করা হয়েছে এজাহারনামীয় ৪৫ জন ও অজ্ঞাত ১৫০ জন। সর্বমোট ১৯৫ জন। তবে পুলিশ এখনো অভিযুক্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা প্রথমে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড অবরোধ করে রাখে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এরপর তারা আরো জমায়েত হয়ে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময়ের মধ্যে লাইফ-লাইন খ্যাত মহাসড়কের দুই লাইনে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আটকা পড়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় গাড়িতে থাকা হাজার হাজার যাত্রীদের। রেহাই পায়নি রোগী বহনকারী এম্বুলেন্সও। অবরোধের বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত ও আশ^স্ত করার চেষ্টা করেন সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সীতাকু- সার্কেল মো. আশরাফুল করিম ও সীতাকু- মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ। সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৫টায় মহাসড়কে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে প্রথমে স্থানীয় জনতা জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের মহাসড়ক থেকে তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় অবরোধকারীরা স্থানীয় জনতার উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয়দের সহযোগিতায় অবরোধকারীদের মহাসড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশবক্স ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা, ককটেল বিস্ফোরণ, দাঙ্গার উদ্দেশ্যে লাঠি-সোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি ভাঙ্গচুর করে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ ও মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অপরাধে জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় এজাহানামীয় ৪৫ জন ও অজ্ঞাত ১৪০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আমরা অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় অবৈধ বাসিন্দাদেও অপরাধ, অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক কার্যক্রমে বেপরোয়া জনতাকে ঠেকাতে সীতাকু- উপজেলার ১০নং সলিমপুর ইউনিয়নের ১নং জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশ মুখে বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, রোড প্রতিবন্ধকতা ও চেক পোস্ট স্থাপন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
২৪ আগস্ট, বুধবার জেলা প্রশাসকের পক্ষে এই কাজের উদ্বোধন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সীতাকু- সার্কেল মো. আশরাফুল করিম, মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।
জানা যায়, তারা অবৈধ দখল টিকিয়ে রাখতে বায়োজিদ-ফৌজদারহাট সড়ক অবরোধ করে। সর্বশেষ মহাসড়ক অবরোধ করতেও তারা দ্বিধা করেনি। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে গত মঙ্গলবার শত শত গাড়িচালক ও যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের উচ্ছৃঙ্খল প্রবণতার কথা চিন্তা করে বায়েজিদ লিংক রোড সংলগ্ন কর্ণফুলী গ্যাস পাইপ লাইনের নিরাপত্তার স্বার্থে এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। গ্যাস পাইপ লাইনের উপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভারী যানবাহন চলাচল করছিলো। একইভাবে চেক পোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। যে কোন অপরাধ সহজে চোখে পড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকু- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চারটি পয়েন্টে রাস্তার প্রতিবন্ধকতা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এর ফলে গ্যাস পাইপ লাইন ঝুঁকিমুক্ত থাকবে এবং অবৈধভাবে পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি নির্মাণের ভারী যন্ত্রপাতি বা ভারী যান চলাচল করতে পারবে না। এখন থেকে চেক পোস্ট ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক সকল বিষয় মনিটরিং করা হবে বলেও জানান তিনি। ছবিঃ সংগৃহীত
Discussion about this post