চট্টগ্রাম, ৮ নভেম্বর, ২০২২:
চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্পট থেকে সকালে কর্মস্থলে যাওয়া যাত্রীদের যানবাহন সঙ্কট একটি বিড়ম্বনা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এতে হুড়োহুড়ি করে গাড়িতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার মত ব্যাপক ঝুঁকিতে যাত্রীদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। আর নয়টা বাজতে বাজতে পুরো নগরজুড়ে যানজটে নাকাল হয়ে উঠে পুরো শহর।
যাত্রীরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ার পর ডিজেলচালিত গাড়িগুলোর নিয়মমীতি ছাড়া ভাড়া বাড়ানোর কারণে গ্যাসচালিত কম ভাড়ার গাড়িগুলোতে যাত্রীরা যাতায়াত করতে চায় বেশি। যে কারণে গ্যাসচালিত গাড়িগুলোতে যাত্রীর চাপ বেশি।
অন্যদিকে এক তৃতীয়াংশ সিটে যাত্রী নিয়েও চলছে ডিজেলচালিত গণপরিবহনগুলো। এতে সাধারণ যাত্রীদের প্রশ্ন– যদি ভাড়া না বাড়ালে তাদের লোকসান হত, তারা কিভাবে এক তৃতীয়াংশ সিটে যাত্রী নিয়ে, বাকি সিটগুলো খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করছে। এক্ষেত্রে তাদের লোকসান কিভাবে পোষানো হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ধরণের যাচাইবাছাই না করেই গণ পরিবহনগুলোর ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। এতে শুধু যাত্রীদের জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করেনি, একই সাথে জ¦ালানির অপচয় করছে। কারণ সিট ক্যপাসিটি অনুযায়ী যাত্রী না নিয়ে গাড়ি যদি এক তৃতীয়াংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে তাহলে, পরিবহন মালিকদের লোকসান না হলেও দেশে যে জ¦ালানি সঙ্কট চলছে, সে হিসাবে জ¦ালানির অপচয় করা হচ্ছে।
বহদ্দার হাটের নিয়মিত যাতায়াতকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি, মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়ে যে পরিমাণ যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধি করেছে, তাতে সারাদিনে একশ’ টাকার চেয়ে বেশি খরচ পড়ে। সব কিছুর যখন দাম বাড়ছে, তখন এমন খরচ সামাল দেওয়া দুরূহ ব্যাপার। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্যাসচালিত গাড়ির দরজায় ঝুলেও কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে, আসতে হচ্ছে।
খুরশিদা আক্তার নামে এক কর্মজীবী নারী বলেন, পুরুষ যাত্রীরা যে কোনোভাবে যাচ্ছেন। কিন্তু নারীদের জন্য এটা সাংঘাতিক বিড়ম্বনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন এই বিপদ নিয়ে কর্মস্থলে যাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
শুধু বহদ্দার হাট নয়, মুরাদপুর, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, ২ নম্বর গেট,চকবাচার, আগ্রাবাদ সহ সকল জায়ড়া থেকে কর্মজীবী যাত্রীদের চলাচলে এই ভোগান্তি চলছে।
অন্যদিকে সারাদিন ব্যাপি নগরজুড়ে কোথাও না কোথাও ট্রাফিক জ্যাম লেগে আছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে নগরজুড়ে যানজট। আর আগ্রাবাদ টাইগারপস এলাকায় উড়াল সেতু নির্মাণ কাজের বিড়ম্বনা। সেখানে যানবাহনের যাত্রী এবং সাধারণ পথচারিদের জন্য কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়াই ছলছে উড়াল সেতু নির্মাণ কাজ। যাতে যানজটের পাশাপাশি সাধারণ পথচারিরা রয়েছেন ঝুঁকিতে।
নগরে বসবাসকারী আবদুল হালিম নামে এক ব্যক্তি জানান, ব্যস্ত নগরে আন্তঃজেলা পরিবহনগুলো প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম- কক্সবাজারগামী বাসগুলো সারাদিন নগরে চলাচল করে, সড়কের বিশাল জায়গা দখল করে রাখে। যদিও তাদের নগরের বাইরে বাস রেখে মিনিবাসে নগর থেকে যাত্রী উঠয়ে নিওয়ার কথা ছিল।
এভাবে যাত্রী পরিবহনের কোনো নিয়মই মানছে না চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতকারী অনেক গণপরিবহন। নতুন করে নগরে প্রবেশ করে অনেক বাস সার্ভিস বিনা অনুমতিতে স্যান্ড করে সেখানে বাস রেখে যাত্রা উঠানামা করে আসছে।
বিশেষ করে নগরের বহদ্দার হাট বাস টার্মিনালে বাস না রেখে বাস নগরে প্রবেশ করে যাত্রী পারাপার করছে কোনো পরিবহন। সম্প্রতি এই প্রবণতা তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন পরিবহণ নতুনভাবে নগরের মধ্যে অঘোষিত বাস স্ট্যান্ড বসিয়ে যানজট সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে শহরে চলছে অননুমোদিত টমটম সহ বিভিন্ন পরিবহন।
নগরবাসীর অভিযোগ ট্রাফিক বিভাগ এবং বিআরটি’ এর খামখেয়ালির জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে নতুনভাবে যানজট ডলপালা মেলছে। তারা যাত্রীদের জন্য কোনো সুযোগসুবিধা সৃষ্টি না করে যাত্রীদের বিড়ম্বনা যাতে সৃষ্টি হয় সেজন্য সুযোগ করে দিচ্ছে।
নগরের যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে- যত্রতত্র প্রাইভেট কার পার্কিং করা। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে প্রাইভেট স্কুল ও হাসপাতালগুলো যানজটের অন্যতম কারণ।
বিশেষ করে নগরের সড়কগুলোর মধ্যে স্কুল, কলেজ ও হাসপাতালগুলোর কারণে দিনের বিশেষ বিশেষ সময়ে যানজটে পড়ে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
একই সাথে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কতিপয় রাজনীতিবিদদের যোগসাজশে ভাসমান দোকানগুলো যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের-ট্রাফিক উত্তর বিভাগের এডিসি কাজী হুমায়ুন রশীদ বলেন, নগরে যানজটের অনেক কারণ আছে। এসবের দায়দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন, বিআরটিসি, বিআরটিএ, চসিক কাউন্সিলর সকলের দায়িত্ব আছে। এ ব্যাপারে সকলকে দায়িত্ব ঠিকঠাকমত পালন করতে হবে। তিনি এই ব্যাপারে সময় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবে জানান।
Discussion about this post