#সাবের আহমদ রিজভী
ভাষার মাস ফেব্রুয়াারি বাঙালির চেতনার প্রতীক, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সূচনা। এবং বাঙালি স্বাধীনতার লক্ষে পৌঁছানোর প্রথম আলোকবর্তিকা। এ ফেব্রুয়াারি মাসজুড়ে একুশের গানটি আমাদের চেতনায় আলো জ্বেলে রেখেছে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি,’ অন্তত এই গানটির জন্য রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী তিনি বাঙালিদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। যতদিন বাঙালি জাতি টিকে থাকবে, একুশের প্রভাতফেরি হবে ততদিন তিনি থাকবেন বাঙালির হৃদয় জুড়ে। ভাষা সৈনিক একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪ সালে, বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে । ১৯৪৭ সাল থেকে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেন গাফফার চৌধুরী। দৈনিক ইনসাফ, সংবাদ, মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ, পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে কলকাতা থেকে মুজিব নগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’য় লেখালেখি করেন। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক ‘আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন।১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান আবদুল গাফফার চৌধুরী। প্রবাসী হয়েও অদ্যাবধি তিনি সমকালসহ বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লিখতেন সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলি নিয়ে। আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। সাংবাদিকতায় যেমন তার অবদান আছে, তেমনি সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’ সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। তার রচিত নাটকের মধ্যে আছে ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। তার নির্মিত ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্রটি দেশেবিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়।আব্দুল গাফফার চৌধুরী ২০২২ সালের ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যখন এই মহিয়ান বাঙালির বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। মৃত্যুর পর ২১ মে তার মরদেহ দেশে আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাঙালি চেতনার প্রতিভূ পুরুষ গাফফার চৌধুরীকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। পরে ঢাকার মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে তাকে দাফন করা হয়।
সব্যসাচী লেখক গাফফার নির্মিত ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ চলচ্চিত্রটির অর্থ যোগানদাতা খুঁজতে তিনি আরব আমিরাত সফরে থাকাকালিন এই মহান মানুষটির সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়, আর চলচ্চিত্রটি দেশেবিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগায়। আবদুল গাফফার চৌধুরীকে চেনার আগেই তার অমর সৃষ্টির সাথে আমাদের পরিচয়! গাফ্ফার চৌধুরীকে হারিয়ে আমরা একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক মানুষকে হারালাম। এমন দেশপ্রেমিক মানুষটাকে আমরা কখনও ভুলব না।
Discussion about this post