চট্টগ্রাম, ২ এপ্রিল, ২০২৩:
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসছে শীঘ্রই। এটি উৎপাদনে এলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ৩ হাজার ৪৭২ মেগাওয়াট। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪ হাজার ৬৭২ মেগাওয়াট।
জাইকার সহায়তায় এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন প্রকল্পটির বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর নির্মাণকাজের ভৌত অগ্রগতি ৯১ শতাংশের বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত বাকি প্রকল্পগুলো মিলিয়ে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ।
মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধনের কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও চাইছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই তা শুরু করে দিতে।
বর্তমানে কেন্দ্রের কমিশনিং সংক্রান্ত নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। তবে এর সঙ্গে আরো বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন চালু করা সম্ভব।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেস্টিং ও কমিশনিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। এটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরু থেকেই কাজ চলছে বিশেষ তদারকির মাধ্যমে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আওতায় কেন্দ্রের কয়লা লোড-আনলোড জেটি, টাউনশিপ, সঞ্চালন লাইন এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত। ফলে একই সক্ষমতার অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে এটি ব্যয়বহুল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার অর্থায়ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাকি ৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব অর্থায়ন। মাতারবাড়ির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে মদুনাঘাট সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে। এজন্য মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ১০০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। বর্তমানে এ সঞ্চালন লাইন দিয়ে পিজিসিবি বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। মাতারবাড়ী চালু হলে এ লাইন দিয়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এর আগে মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে চকরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন ও মাতারবাড়ী ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় সম্প্রতি পায়রা ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকলেও মাতারিবাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সঙ্কট হবার সম্ভাবনা নেই।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জাপানের সিংহভাগ অর্থায়নে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। ফলে কয়লার ব্যবস্থাও তারা করছে। পরবর্তী সময়ে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
সিপিজিসিবিএল সূত্রে জানা গেছে, প্যাকেজ ১ ও ২-এর আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর নির্মাণ, চ্যানেল রিভেটমেন্ট, সেডিমেন্ট মিটিগেশন ডাউক, সিওয়াল নির্মাণ এবং ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রের পাওয়ার হাউজ, বয়লার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ফ্যাসিলিটিজের নির্মাণকাজ চলমান।
দেশে বর্তমানে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রয়েছে।
এর একটি পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং অন্যটি বাগেরহাটের রামপালে একই সক্ষমতার মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনে রয়েছে। মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে দেশে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বৃহৎ তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে।
দেশে বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত উৎপাদনে আসলে বাংলাদেশ ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসতে পারবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর সূত্র: বণিক বার্তা
Discussion about this post