চট্টগ্রাম,১২ নভেম্বর, ২০২৩:
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজকে নির্মম ও নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিমকে(৫০) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজ ১২ নভেম্বর মধ্যরাতে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মামলার ৮৮নং এজাহার নামীয় আসামি মোঃ জাকির হোসেন জসিম (৫০), পিতাঃ মৃত ওয়াজিউল্লা, সাং-ধলিয়া, থানাঃ-ফেনী সদর, জেলাঃ ফেনীকে গ্রেফতার করে।
এছাড়া র্যাব ৫ ইউসুফ আলীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর এলাকা থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে।
কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ২৯ অক্টোবর পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিমের বিরুদ্ধে ফেনী এবং খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন থানায় সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বেআইনি সমাবেশ, নাশকতা, হত্যাচেষ্টাসহ সর্বমোট ১৩ টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ হত্যা মামলার আসামি জাকির পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলায় অংশগ্রহণ করে বলে জানিয়েছেন র্যাবকে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশে ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম তার অনুসারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল – পুলিশের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলা চালিয়ে তদের মনোবল ভেঙে দেয়া।
নির্দেশনা মোতাবেক কাকরাইলে উপস্থিত বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলের সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিস সংলগ্ন ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম তার অনুসারীদের নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি জসিম ও অন্যদের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের অপর প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিতে হামলা করে।
হামলার প্রেক্ষিতে পশ্চিম প্রান্তে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অপর প্রান্তে পুলিশ সদস্যরা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ সদস্যদের ওপর ছাত্রদল নেতা আমান এবং ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিমের নেতৃত্বে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।
নাশকাতকারীদের বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যায়। এমন সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। উপর্যপুরি আঘাতের ফলে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে।
জসিম ওরফে জাকির সহ অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। আঘাতের একপর্যায়ে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করে ছাত্রদল নেতা আমান এবং জাকির হোসেন জসিম তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
এর পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায় শামীম রেজা ও মো. সুলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্তত ছয়টি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়ান দলটির নেতা-কর্মীরা। ওইদিন সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য পারভেজ ছাড়াও যুবদলের ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা নিহত হন।