চট্টগ্রাম, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩:
চলমান ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পেট্রোবাংলা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৮টি এলএনজি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা করেছিল। তবে ২২টি এলএনজি কার্গো আমদানির মাধ্যমে সেই চাহিদা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, আমদানি অর্ধেক কমানোর পেছনে ডলার সংকটই প্রধান কারণ।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি হ্রাস চলমান গ্যাস সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আসলে চলমান ডলার সংকট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে অর্থ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত ডলার পেতে তার মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছে।
কিন্তু আমরা আমদানি পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত ডলারের সরবরাহ পাচ্ছি না।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দেশে ৪০০০ এমএমসিএফিডির বিপরীতে প্রতিদিন ১৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা পেট্রোবাংলার অফিসিয়াল তথ্যে দেখা যায় যে দেশে ১৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৪০০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে আমদানি করা এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সহ ২৪৪৫ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড যারা ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে গ্যাস সরবরাহ করে তারা বলেছেন যে- তারা ১৮০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে এখন ১৪০০-১৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস পেয়েছে যেখানে ৩০০-৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে।
তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক ডলার সংকট পেট্রোবাংলাকে তাদের এলএনজি আমদানি কমাতে বাধ্য করেছে, যা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সংকট আরও তীব্র করেছে।
চলমান ডলার সংকট নিরসনের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পেট্রোবাংলার স্থানীয় উৎস থেকে এলএনজি আমদানি বা উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত বছরের ৪৮ ডলার থেকে এ বছর ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে যা বৈশ্বিক বাজার থেকে এলএনজি কেনার বিপরীতে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের অর্থ প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত ডলার সঙ্কটে পড়েছে পেট্রোবাংলা।
দেশের গ্যাস শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শীতকালে ডলারের সঙ্কট কমার কোনো দৃশ্যমান লক্ষণ না থাকায় সার্বিক গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা মহানগরীর অনেক এলাকা গ্যাস সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকদের।
আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে কারণ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।
গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহকরাও সঙ্কটে পড়েছে।
এসব এলাকার বাসিন্দারা দিনের বেলায় পর্যাপ্ত গ্যাস পান না বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি লিখে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কারণ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের অনেক মিল তীব্রভাবে গ্যাসের সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। খবর: ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ’র সৌজন্যে
Discussion about this post