চট্টগ্রাম, ০১ নভেম্বর,২০২১:
ছাত্র লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলার শিকার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র মুমুর্ষূ আকিব মাহদির হাসপাতালে ভর্তির ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আকিবের উপর হামলার বর্বরতা দেখে নেটিজেনরা ধিক্কার জানাচ্ছে ছাত্র রাজনীতি নামের সন্ত্রাসকে। অন্যদিকে তার জন্য অনেকে দোয়া ও প্রার্থনা করছেন যাতে মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। অনেকের প্রশ্ন কেন এমন মেধাবী একজন ছাত্রকে রাজনীতি নামের জঘণ্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে হল?
গতকাল শুক্রবার রাতে কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে মারামারির জের ধরে শনিবার দুপুরে আবার সংঘর্ষ হয়। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিব ক্লাস করতে বের হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মধ্যে হামলায় মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে পরিচিত আকিবকে ক্যাম্পাসের অদূরে পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের সামনে একা পেয়ে ধারালো অস্ত্র, স্ট্যাম্প, রড, ছুরি ও কাঁচের বোতল নিয়ে তার উপর হামলা চালানো হয় বলে তার পক্ষের নেতাকর্মীদের দাবি। নওফেলের অনুসারী এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ডায়গনস্টিকের সামনে নিয়ে তাকে রড, কাঁচের বোতল, ছুরি, ক্ষুর, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকিবের ছবি দেখে ফেসবুকে সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ লিখেছেন,
"পুরো মাথা জুড়ে সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো। এক পাশে গোলাকার দাগ টানা হয়েছে, সেখানে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। মাথায় যাতে কেউ স্পর্শ না করে তাই যথারীতি আঁকা হয়েছে বিপদ চিহ্নও।
এই শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ৬২ তম ব্যাচের ছাত্র মো. মাহাদি আকিব, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন। তাঁর মাথার খুলি থেঁতলে গেছে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় চমেকের মেইন গেটের অদূরে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ। সতীর্থরা জানান, গতকাল সকাল ৯টায় পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে মাহাদি আকিবকে পেয়ে ঘিরে ধরেন প্রতিপক্ষরা। গলায় রিকশার চেইন দিয়ে বাধা হয়। কাচের বোতল দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। রামদা দিয়ে কোপানো হয় মাথায়। পরে হকিস্টিক দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।
দুপুরে আজকের পত্রিকায় অনুজ জমির উদ্দিনের এমন প্রতিবেদনটি পড়ে মনটা কেঁদে ওঠে । বলার যেমন ভাষা নেই, করারও শক্তি নেই। শুধু নষ্ঠ রাজনীতির শিকার নটরডেম কলেজ থেকে পাশ করে চমেকে সুযোগ পাওয়া এই মেধাবীর জন্য দোয়াই করতে পারি, সৃষ্ঠিকর্তা তাকে যেন ফিরিয়ে আনেন।
সৈয়দ সবুজ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,'
গলায় রিকশার চেইন দিয়ে বাধা হয়। কাচের বোতল দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তারপর রামদা দিয়ে মাথায় কোপানো হয়। সর্বশেষ হকিস্টিক দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। মাহাদি আকিব তোমার জন্য ১০০ লাইন লিখতে পারি! কিন্তু'তা করছি না। শেষ করছি কয়েকটি প্রশ্ন রেখে। কি রাজনীতি করছো? কাদের রাজনীতি করছো? কেন করছো? তোমাকে যারা পিটিয়েছে তারাও মেধাবী ছাত্র। হয়তো একদিন ডাক্তারও হবে, পাশাপাশি নেতাও হতে পারে! প্রশ্ন হলো, তাদের কাছে জাতি কতটুকু নিরাপদ থাকবে?'
bcs: our goal নামে একটি ফেসবুক পেইজে লেখা হয়েছে, 'ছেলেটা আমার স্কুলের ছোট ভাই(কুমিল্লা জিলা স্কুলের)
জিলা স্কুলের শ্রদ্ধেয় ফারুক স্যার এর ছেলে আকিব। আজ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আইসিইউ তে লাইফ সাপোর্টে আছে।
আর কিছু বলার ভাষা নাই।জানিনা স্যার এর বর্তমান মানসিক অবস্থা কেমন, ভাইটার সুস্থতা কামনায় দোয়া করবেন। #Pray_for_Aqib #We_want_justice_for_Aqib
বুয়েটে আবরার হত্যার সঠিক বিচার হইলে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে এমন দৃশ্য দেখা লাগতো নাহ।
প্লিজ, শেয়ার দিয়ে দ্রুত ভাইরাল করুন।
আবরার, আকিব, এরপর কে??????
ইয়াসিন আরাফাত বাপ্পি লিখেছেন,'আকিব - নাইমুল - মাহফুজ
প্রত্যেকের উপর হামলাকারীদের বিচার চাই'।
দি স্পারো নামে একটি ফেসবুক পেইজে লেখা হয়েছে, 'কুমিল্লা জিলা স্কুলের কৃতি সন্তান আকিব:
একটা এপ্রোন পড়া ছেলে দৌড়াচ্ছে,দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ পড়ে গেলো।সামলে উঠে দৌড় দেবার আগেই পিছ থেকে আরেকদল এপ্রোন পড়া ছেলে(তারই ব্যাচমেট) এসে ধরে ফেললো। মাথার উপর দিলো খুরের কোপ। একটার পর একটা কোপ আর কোপ :)
চট্টগ্রামের মত বিভাগীয় শহরের একটা সরকারি মেডিকেলের সামনের রাস্তায় সারি সারি ফার্মেসিতে দোকানদার,খরিদদার,ফুটপাতে লোকজন, হকার,রাস্তায় রিক্সা,সিএনজি,গাড়ি। কেউ আগায়া আসলো না।
কয়েক বছরের স্বপ্ন,৩-৪টা মাসের রাত জাগা পরিশ্রম,১ ঘন্টার মেধা যাচাই পরীক্ষা,একটা রেজাল্ট,স্বপ্নপূরণ।
মেডিকেলকে পরের ৬ বছরের সেকেন্ড হোম ভাবা!! উহু না,মেডিকেলটা যদি চমেক হয় তাহলে মোটেও সেকেন্ড হোম না।কেবল যাও, পড়ো,এক্সাম দাও, সার্টিফিকেট নাও আর ভাগো।
বেশি তেড়িবেড়ি করলে কোপ দিবে কিন্তু মনে রেখো।
আকিবের বাবা-মা কে কী জবাব দিবেন?
সাথের নির্দোষ এত এত স্টুডেন্টের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়ে কী শান্তি পেলেন আপনারা?
একটা সুন্দর ক্যাম্পাস চাই।সুন্দর ক্যাম্পাসে আকিবকে আবার সুস্থভাবে দেখতে চাই।সুস্থভাবে বাধাহীন ভাবে আমরা পড়াশোনা করতে চাই।
মোহাম্মদ নাছির নামে ফেসবুক ব্যবহারী লিখেছেন, ' আমি ভেবে উত্তর খুঁজে পাইনা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একজন ভালো ডাক্তার হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিনা ! তাই যদি হয় এই দেশের মেধাবী আর মেধাহীন সবাই আদু ভাইদের অনুসরণ করছে। দুঃখজনক।
ইমরান পোদ্দার লিখেছেন, 'বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ভালো নেই আজ। বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে নিয়ে ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের গ্রুপিং সংঘর্ষের শিকার অত্র কলেজের মেধাবী ছাত্র আকিব।
আকিবের বাবা মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ কুমিল্লা জিলা স্কুলের শিক্ষক। আকিব কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার অন্তর্গত দুই নং চৌয়ারা ইউনিয়নের কিংবামিশা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পোদ্দার বাড়ীর সন্তান। বঙ্গবন্ধু এমন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন নাই যে ছাত্রলীগের দ্বারা জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মান ক্ষুন্ন হবে।
এ সমস্ত ঘটনার যেনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং সকল দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেই সাথে আকিবের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। দেশবাসীর নিকট "আকিবের" জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকিব জে মাহাদির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সার্জারির পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পুরো সুস্থ হওয়া সংক্রমণ ও মস্তিষ্কের আচরণের উপর নির্ভর করছে। তবে কম বয়স ও দ্রুততম সময়ে সার্জারি হওয়ায় তার সুস্থ হওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী।
আকিবের মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারকারী চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, শনিবারের চেয়ে তার অবস্থা উন্নতি হয়েছে। মাথার ডান দিকে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। এতে লিনিয়ার ফ্র্যাকচার অব দ্য বোন, এক্সট্রাডুরাল হিমাটোমা, একিউট সাবডুরাল হিমাটোমা, আন্ডারলাইন ব্রেইন ইনজুরি এন্ড ব্রেইন কনটিউশন, টেম্পোরাল পেরাইটার এবং ফ্রন্টাল ইনজুরি হয়। তিনি বলেন, সার্জারির পরে তার মাথার খুলির হাড়ের একটা অংশ খুলে রাখা হয়েছে। ব্রেইন সোরেজিং যেহেতু বেশি ছিল তাই আর্টিফিশিয়াল ডুরামেটার দিয়ে ব্রেইনের পর্দা তৈরি করেছি। হাড়টা সেখানে দেওয়া যায়নি। দিলে ব্রেইনের ওপর চাপ তৈরি হবে। সেজন্য সেটা বের করে নিয়ে পেটের চামড়ার নিচে আলাদা একটা কক্ষ তৈরি করেছি। ওখানে হাড়টা রেখেছি। পরে সে সুস্থ হলে দ্বিতীয় অপারেশন করে হাড়টি প্রতিস্থাপন করা হবে। তিনি আকিবের জ্ঞান ফিরেছে জানিয়ে বলেন, আইসিইউতে যে টিউবের ভিতরে রাখা হয়েছিল, সেটা বের করেছি। বাকিটা অভ্যন্তরীণ রিকভারির বিষয়। সেটা সময়সাপেক্ষ। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রলীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারী হিসাবে পরিচিত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আ জ ম নাছির গ্রুপের মাহফুজ ও নাইমুল ইসলাম এবং মহিবুল গ্রুপের আকিব হোসেন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে চমেক এর প্রধান ছাত্রবাসে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। এ ঘটনার রেশ ধরেই শনিবার সকাল ৯টায় আবার এক পক্ষ অপর পক্ষকে আক্রমণ করে।
Discussion about this post