চট্টগ্রাম, ৩ আগস্ট, ২০২২:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফতাব হোসাইন গত শুক্রবার রাত ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট এলাকায় সড়ক পারাপারের সময় বেপরোয়া মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।
রাতে এই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে রাত দুইটার দিকে চবির একদল শিক্ষার্থী এক নম্বর গেটে জড়ো হয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন এবং যান চলাচন বন্ধ করে দেন। এ সময় বেশকিছু দাবি পূরণের আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এ এস এম জিয়াউল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, একটি কাজে নিজের স্কুটি চালিয়ে শহরে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ শেষ করে রাতে স্কুটিতে করেই ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট ও মদন হাটের মাঝামাঝি এলাকায় পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার সজোরে স্কুটিকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় প্রাইভেটকার চালক মাসুদ পারভেজকে আটক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ড. আফতাব হোসাইনের মৃত্যুর পর এক নম্বর গেট এলাকায় গতকাল শনিবার হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেব্রাক্রসিং ও গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। অথচ চবির ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে জেব্রাক্রসিং ও গতিরোধক নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও কানে তুলেনি কর্তৃপক্ষ।
সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মারা যাওয়ার পর জেব্রাক্রসিং স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালির কারণে দুর্ঘটনায় এই শিক্ষককে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে জানান কোনো কোনো শিক্ষার্থী। অন্যদিকে চালকের অসর্তকতাকেও দায়ি করছে তারা। যে কারণে ঘাতক মাইক্রোর চালকের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, আমরা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরকে এর আগেও অনেকবার জানিয়েছিলাম এখানে স্পিড ব্রেকার স্থাপনের জন্য। এখন আবারও জানিয়েছি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। আমরা হাটহাজারী থানা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সাথেও এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আজ (গতকাল) জেব্রাক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার স্থাপন করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম বলেন, একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের যে পূর্ব পরিকল্পনা ছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। সড়ক বিভাগও এ বিষয়ে আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের পূরণের আশ্বাস পেয়ে ৪ ঘণ্টা পর সড়কের অবরোধ তুলে নেন।
দাবিগুলো হচ্ছে- ফুটওভার ব্রিজ ও স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, রোড মার্কিংয়ের ব্যবস্থা; বাস, সিএনজি থামার জন্য নিরাপদ দূরত্বে স্থান নির্ধারণ ও গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ নির্ধারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এসব দাবি পূরণের আশ্বাস দেন।
গতকাল শনিবার জোহর নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিহত শিক্ষককের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
Discussion about this post