চট্টগ্রাম, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
সফল চলচ্চিত্র পরিচালক, কাহিনিকার, প্রযোজক ও অসংখ্য গানের গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই।‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয় সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের রচয়িতা তিনি। বিবিসির চালানো জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ বাংলা গানের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে তার তিনটি গান। গানগুলো হল- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’।‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি আনোয়ার পারভেজের সুরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত হিসেবে গাওয়া হত মুক্তিযুদ্ধকালীন।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এছাড়াও আরো শোক জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ
একুশে পদক,স্বাধীনতা পদক ও পাঁচবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত গাজী মাজহারুল আনোয়ার রোববার সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণকরেন।এর আগে তিনি হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই কিংবদন্তির গীতিকার।তবে তার পুত্র বধূ শাহানা মির্জা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত েকয়েকদিন ধরে তিনি এসিডিটির সমস্যায় ভুগছিলেন।এজন্য তার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছিল। এরমধ্যে আজ সকালে তার অসুস্থতা বেড়ে যায়। মৃত্যুকালে এই কিংবদন্তি শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
১৯৬৫ সালে চলচ্চিত্র শিল্পে যুক্ত হবার পর গাজী মাজহারুল আনোয়ার চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ ও কাহিনি রচনা করে খ্যাতি লাভ করতে থাকেন।এবং প্রতিটি অঙ্গনে তার প্রতিভার দ্যুতি ছড়াতে থাকে। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ১৯৬২-৬৩ সালে গাজী মাজহারুল আনোয়ারে প্রথম গান ‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’ রচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ, অনুভূতির কথাই ছিল তার গান রচনার উপজীব্য বিষয়।
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের পরিচালিত ও প্রযোজিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা চল্লিশের বেশি।তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সরবোর্ড সদস্য ছিলেন।রাজনৈতিকভাবে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।ছিলেন বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসেরও উপদেষ্টাও। ১৯৭২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
তিনি ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ। গান লেখা শুরু করেন ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি রেডিও পাকিস্তানে। তার রচিত গানের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।
স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।তার স্ত্রী জোহরা গাজী, ছেলে সারফরাজ আনোয়ার এবং মেয়ে দিঠি আনোয়ার।
এই অনন্য গুণী ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে কণ্ঠশিল্পী আনোয়ার দিঠি আমেরিকার থেকে দেশে ফিরলে প্রয়াতের মরদেহ সৎকারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ছবি ও খবর: সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত
Discussion about this post