চট্টগ্রাম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২:
সীমান্তে প্রতিদিনই প্রচ- গোলাগুলির মধ্যে এবার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৩৩ কিলোমিটারজুড়ে নতুন করে স্থলমাইন বসিয়েছে মিয়ানমার। শতাধিক মর্টারশেল বিষ্ফোরণের বিধ্বংসী আতঙ্কের মধ্যে স্থলমাইনগুলো সীমান্তের মানুষের বসবাস আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা জানান, নতুন করে বসানো এ মাইনের আঘাতে ৩৫ পিলারের কাছাকাছি স্থানের একটি ছড়ায় গরু আনতে গিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পা হারান তুমব্রু হেডম্যান পাড়ার যুবক অন্ন থোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা (২৮)। এর ২দিন আগে এ পয়েন্টে ১টি চোরাই গরুর পা উড়ে গিয়েছিল স্থলমাইনে। আগে এ পয়েন্টে ক’বছর আগে এক পুলিশ সদস্যসহ ২ বাংলাদেশি মারা যায়। অনেকেই আহত হয়েছিল।
ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ল্যান্ড মাইন্স বা আইসিবিএলএম-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে সীমান্তে উভয় দেশের ৬৪ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এরা মূলত কাঠুরিয়া, বনজীবী বা চোরাকারবারী ছিলো। আর সে সময় আহত হয়েছিলো আরো ৮৭ জন। এখন নতুন করে স্থলমাইন বিষ্ফোরণের ফলে সীমান্তে নতুন করে মাইন আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মাইন ডিফিউজ, আইডেনটিফিকেশন ও প্রিভেনশনের ট্রেনিংপ্রাপ্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটের সদস্যরা এ মাইন বসান আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে। তারা সীমান্তের তুমব্রুর উত্তরাংশের হেডম্যান পাড়া সংলগ্ন ৩৫ পিলার থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৩ কিলোমিটার সীমান্তের জিরো পয়েন্টজুড়ে এসব মাইন বসান বলে নিশ্চিত করেন সীমান্তে বসবাসকারী একাধিক সূত্র।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল আবসার ইমন বলেন, মিয়ারমারের জান্তা সরকারের সেনা ও বিজিপি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে জিরো পয়েন্টে মাইন বসিয়ে আসছে।
তিনি সীমান্তের জিরো লাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থলমাইন বসানোর খবর পেয়ে তার এলাকার সীমান্ত পয়েন্টে বসবাসকারী অধিবাসীদের জিরো পয়েন্টে না যেতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন বলে জানান।
বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। পুরো সীমান্ত সিল কর দেয়া হয়েছে। কেননা মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে একদিকে গোলাগুলি চালাচ্ছে অন্যদিকে স্থলমাইন বসিয়ে তাদের সীমানায় শত্রু দমনের চেষ্টা করছে।
জানা গেছে সীমান্তে মিয়ানমার শতাধিক মর্টারশেল নিক্ষেপ করেছে। মর্টারশেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু বাজারসহ আশপাশের এলাকা। এতে বাজারের ব্যবসায়ী ও সীমান্তে বসবাসকারী চরম সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে গোলাগুলির পর এই প্রথম মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলো। যে কারণে নো-ম্যান্স ল্যান্ডের সাড়ে ৪ হাজার মানুষ স্ব-স্ব আশ্রয় শিবিরে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েকটি আর্টিলারি মর্টার বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা, তার কিছু সময় বন্ধ থেকে আবারো কয়েকটি বড় বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো সীমান্ত এলাকা। নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম হতে আষারতলী পর্যন্ত যতগুলো সীমানা পিলারের পয়েন্ট রয়েছে তার মধ্যে বেশি স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে তুমব্রুর ৩৪ ও ৩৫নং পিলার। এই দুই পিলারের মাঝখান দিয়েই সর্বোচ্চ বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে আসে।
যে কারণে সীমান্তবর্তী মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অনেকে রাতের বেলায় ঘরবাড়ি ছেড়ে দূওে স্বজনদেও বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
তবে মিয়ানমার বাহিনীর গোলাগুলি ও মাইন বিষ্ফোরণের কারণে তুমব্রু পয়েন্টে আতঙ্কগ্রস্ত ৩শত পরিবারকে অন্যত্র সরাতে বাংলাদেশ সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানা গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা ফেরদৌস এজন্য খসড়া তালিকা প্রস্তত করছেন বলে নিশ্চিত করেন।
Discussion about this post