চট্টগ্রাম, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২:
চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাপট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে গবেষণাকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় জাহাজ ভিড়ানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হবে।
বিদেশ থেকে বেশি পরিমাণে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি-রপ্তানিকারকদের দাবি ছিল বড় জাহাজ ভিড়ানোর। এই প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দর লন্ডনের এইচআর ওয়েলিং পোর্ট নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেলে গবেষণার দায়িত্ব দেয়। তারা সমীক্ষা চালায় সব্বোর্চ কত ড্রাফট ও লম্বা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকতে পারবে তা গবেষণা করে দেখার।
এ ব্যাপারে তারা তিনটি বিষয় নিয়ে গবেষণা চালায়। বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভিড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন বিশেষ পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে উক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরে সমীক্ষা পরিচালনা করে। গত এপ্রিল মাসে তারা প্রাথমিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেছিল। সম্প্রতি তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে সংস্থাটি বন্দর চ্যানেল, কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য- উপাত্ত উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এখনই ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লেংথের জাহাজ ভিড়ানো যাবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আরও ছোট ড্রাফট ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারত।
আবার বিশ্বের শিপিং সেক্টরের অনেক জাহাজই বন্দরে আসতে পারে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে শিপিং ব্যবসা এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িতরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের লেংথ ও ড্রাফট বাড়ানোর ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সুনিশ্চিত না হয়ে হুট করে ড্রাফট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়নি।
তবে বহির্নোঙর ও গুপ্তাখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দুয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ২২৫ মিটার লেংথের ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে বলে গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে রিপোর্ট প্রদান করেছে তার প্রেক্ষিতে আমরা সপ্তাহখানেকের মধ্যে ট্রায়াল রান চালাব। এই রানে সফল হলে আমরা বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোকে বড় জাহাজ পাঠানোর জন্য। তবে বন্দরের সব জেটিতে একই সমান ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যাবে না। ১৮ টি জেটির মধ্যে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) কয়েকটিতে ড্রাফট বাড়ানো যাবে। বন্দরের জিসিবির ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে বর্তমানে সাড়ে আট মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ানো যায়। সেখানে ড্রাফট কিছুটা বাড়ানো গেলেও ১০ মিটার করা যাবে বলে মনে হয় না। তবে ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ড্রাফট ১০ মিটার করা সম্ভব হবে।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, জিসিবির ৬টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ে। সেখানে ১০ মিটার ড্রাফট করা সম্ভব হবে।
২০০মি. দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারলে ২৭শ-২৮শ টিইইউএস কন্টেনার পরিবহন করা সম্ভব হবে জাহাজগুলোতে। এতে কম খরচে কন্টেইনার পরিবহন ও কন্টেইনার হ্যান্ডিলিংয়ে গতি আসবে। তেমনি অর্থনৈতিকভাবে প্রত্যেকে লাভবান হবে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ছবি: বিশ্বের বড় জাহাজগুলোর একটি (অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা ছবি)
Discussion about this post