চট্টগ্রাম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩:
সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী শিব চতুর্দশী মেলা আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। মেলায় ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থিদের আগমন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সনাতনী হিন্দুধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম তীর্থস্থান খ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকু-ের চন্দ্রনাথের এই মেলায় লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ থেকেও এই শিব চতুর্দশী মেলায় যোগ দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনদিন ব্যাপি শিব চতুদর্শী মেলা হবে। এই মেলা এক মাসব্যাপি চলবে। তবে পঞ্জিকামতে, মেলার মূল তিথি শুরু হবে শনিবার ৬টা ৩৬ মিনিটে। তিথি শেষ হবে রবিবার বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে।
শিব চতুর্দশী মেলা উপলক্ষে সীতাকু- রেল স্টেশনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামি এবং চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামি প্রতিটি ট্রেন ২-৫ মিনিট যাত্রা বিরতি করবে।
মেলার নিরাপত্তায় সাড়ে পাঁচশ পুলিশের অংশগ্রহণে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই মেলায় অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সমবেত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ এই মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ৫৫০জন সদস্যসহ আনসার, র্যাবসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি থাকবে। মেলায় কেউ কোন অরাজকতা করতে চাইলে আমরা কঠোর হাতে দমন করবো। সার্বিক দিক মনিটরিং করতে বিভিন্ন স্থানে সিসি টিভি ক্যামেরা রয়েছে। কোন রকম অপ্রীতিকর বিষয় এড়াতে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো।
মেলা কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, মেলায় আগত তীর্থ যাত্রীরা নির্বিঘ্নে মেলা,পূজা করতে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখানে স্রাইন কমিটি ও মেলা কমিটির পাশাপাশি, পুলিশ, রর্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।
স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. চন্দন দাশ বলেন, প্রতিবারের ন্যায় যথারীতি মেলা শুরু হবে। তীর্থ যাত্রীদের সুবিধার্থে মন্দিরে মন্দিরে প্রায় ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন।
মেলায় এবার কোন উদ্বোধন পর্ব থাকছে না, থাকছে না বিশ্ব বৈদিক সম্মেলনও। মেলাকে ঘিরে তীর্থ যাত্রীদের মন্দিরে মন্দিরে পূজা, অর্পণসহ নানাবিধ কাজ সুন্দরভাবে করতে যাবতীয় প্রস্ততি সম্পন্ন করেছেন বলে স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. চন্দন দাশ জানিয়েছেন।
ফাল্গুন মাসের চতুর্দমী তিথিকে বলা হয় শিব চতুর্দশীও। এদিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত শিবপূজা করে থাকেন। সীতাকুণ্ডে শিবপূজার সাথে চন্দ্রনাথ ধামের মহাতীর্থভূমির মঠ মন্দিরগুলো দর্শন করে পূণ্যলাভ করেন সেখানে আগতরা। যে কারণে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ সারাবিশ্বের হিন্দুরা এই তিথিতে অংশগ্রহণ করার জন্য সীতাকুণ্ডের শিব মেলায় সমবেত হন।
শিব চতুর্দশী মেলা উপলক্ষে মহাসড়ক থেকে শুরু করে শঙ্করমঠ মিশন পর্যন্ত সর্বত্র মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। রাস্তার উভয় পাশে হরেক রকমের দোকান বসে। এতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে যোগ দেন অন্য ধর্মের লোকও। মঠ-মন্দিরের পূজা-প্রার্থনা ছাড়াও উক্ত মেলায় দূরাগত দর্শনার্থীরা তীর্থদর্শন, খাওয়া দাওয়া কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরেন। এই মেলার ব্যাপকতা ও ব্যাপ্তি সৃষ্টি হয়েছে শত শত বছর ধরে।
চন্দ্রনাথের পাহাড় শুধু ধর্মীয় স্থান হিসাবে নয়, পর্যটন স্থান হিসাবেও এটি বিখ্যাত। ১৩৫০ ফুট উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এই মন্দিরে উঠতে গিয়ে আরও বহু মন্দিরের দেখা মিলে সেখানে। চতুর্দশী তিথিতে মূলত শম্ভুনাথ মন্দিরে পূজা-প্রার্থনা হয়। শিবরাত্রির ব্রত উপলক্ষে এই আয়োজন।
জানা যায়, এই রাতে শিবকে স্বপ্নে পেয়েছিলেন পার্বতী। কোথাও কোথাও বলা হয়েছে, এই রাতে শিব পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। অন্যমতে এই চতর্দশী রাতে শিব কালকূট বিষ পান করে নীলকণ্ঠ হয়ে পৃথিবীর সৃষ্টিকে রক্ষা করেছিলেন বলে শিববাত্রি ব্রত পালন করা হয়।
শিবরাত্রি ব্রতে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ দুধ, ডাবের জল দিয়ে শিবকে স্নান করিয়ে তার পূজা করেন। সারাদিন উপবাসের মাধ্যমে এই পূজা করা হয়।
Discussion about this post