চট্টগ্রাম, ১৬ জুন, ২০২৩:
এবারের বর্ষায় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কম হতে পারে। ইতিমধ্যেই সিডিএ’র বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ ৭৬ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে প্রকল্পের আওতায় ২১ টি খাল রয়েছে। সেগুলোর কারণে জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি খাল ও নালা অপরিষ্কার থাকার কারণে সেখানে ময়লা আবর্জনা জমাট বেঁধে সংলগ্ন এলাকায় নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
সিডিএর প্রকল্প পরিচালক কর্নেল শাহ আলী সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তাদের প্রকল্পের কারণে এবার জলাবদ্ধতা হবে না। তবে প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খাল ও ১৩০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা আবর্জনায় ভরাট হয়ে থাকার কারণেই পানি জমবে।
তিনি জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের সংস্কার কাজ করছি আমরা। ৩৬টি খালের কোথাও বাঁধ নেই। খালে নির্মাণকাজের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। সব বাঁধ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। খালগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রকল্পের কারণে জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু প্রকল্পের বাইরে থাকা খাল-নালা-নর্দমা পরিষ্কার করতে হবে। এগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব চসিকের। তারা কাজ যথাযথ করলে জলাবদ্ধতা হবে না।
সিডি ‘র চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড আরও জানায়,
প্রকল্পের আওতায় ৪৫টি ব্রিজ ও ছয়টি কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেনাবাহিনী নির্মিত কোনো ব্রিজ ও কালভার্টের নিচে সেবা সংস্থাগুলোর লাইন নেই। যার কারণে আবর্জনা আটকে জলাবদ্ধতা হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু নগরের অন্যান্য ব্রিজ ও কালভার্টের নিচে গ্যাসলাইন, ওয়াসার লাইন কিংবা বিটিসিএলের পাইপলাইন আছে। এসব লাইনে বৃষ্টির পানির সঙ্গে আবর্জনা আটকে পানি জমে।
তারা জানায়, সিডিএ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই প্রকল্পের পাঁচটি স্লুইস গেটের কাজও সমাপ্ত হয়েছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি সুচারুরূপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করে। একই বছরের শেষ দিকে সেনাবাহিনীর ৩৪, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কাজ শুরু করে। কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় কাজ সমাপ্তির টার্গেট বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
ইতিমধে্য তারা ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ১১৮ কিলোমিটারের কাজ সমাপ্ত করেছে । ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্টের সবগুলোর নির্মাণ শেষ হয়েছে। সড়কের পার্শ্ববর্তী ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কারের পাশাপাশি ১০.৭৭ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।খালের মুখে ৫টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজও সমাপ্ত। নগরীতে মোট ১৬০০ কিলোমিটার ড্রেনের মধ্যে তারা ৩২০ কিলোমিটারের আবর্জনা অপসারণ করেছে।
এছাড়া সিডিএ আলাদাভাবে ১২টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩টি রেগুলেটর নির্মাণের কাজ করছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড আরও জানায়, ১৫টি খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ- প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ সার্বিক সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে আরও কমপক্ষে সাতটি খালের কাজ শেষ হবে। বাকিগুলোর কাজ পরবর্তী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হতে পারে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
৪২টি সিল্ট ট্র্যাপের মধ্যে ১৩টি স্থাপন করা হয়েছে। খালপাড়ের রাস্তা ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং ৫০ কিলোমিটার ফুটপাতের মধ্যে ৫.৫০ মিটারের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ।
এদিকে নগরের শীতলঝর্ণা, বামুনশাহী এবং গয়নাছড়া খাল সংলগ্ন এলাকায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বলে সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই তিনটি খাল পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। তবে খাল তিনটির নিচের ময়লা আবর্জনা সরানো হয়েছে বলে দাবি করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
তবে চট্টগ্রামে এক সপ্তাহ ধরে নগরীতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতার কোনো খবর না থাকলেও নিম্ন এলাকাগুলোতে পানি জমছে। এসব জায়গায় যেমন রাস্তা নিচু, তেমনি রাস্তার কাজেও গোঁজামিল আছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। অন্যদিকে এমন নিচু এলাকার খালনালা কিছুই পরিষ্কার করা হয়নি। যে কারণে সাময়িক পানি উঠার সম্ভাবনা দেখছে এলাকাবাসী।
ছবি: কাজ চলাকালীন ছবি।(সংগৃহীত)
Discussion about this post