চট্টগ্রাম,১১ জুলাই, ২০২৩:
আধুনিক বাংলা গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিল্পী কবীর সুমন বলেছেন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের পথিকৃৎ শিল্পী মলয়ঘোষ দস্তিদারের ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি’, পানি, লুসাই পাহাড়ত্তুন লামিয়ারে যার গৈ কর্ণফুলী’ গানটি হান্টিং সুরের এক অসাধারণ গান। তিনি লিখেছেন(ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা), সুন্দর গান গাইতেন ফারুক। এখনও নিশ্চই গুন্গুন্ করে গেয়ে ওঠেন কখনও। তাঁর কন্ঠেই শুনেছিলাম আশ্চর্য এক গান: “সোডো সোডো ঢেউ তুলি।” – চট্টগ্রাম বেতারের এক স্টাফ আর্টিস্ট মলয় দস্তিদার/নাকি ঘোষদস্তিদার-এর রচনা। – ফারুক, ভুল হলে শুধরে দিস। অমন haunting সুর জীবনে ক’বার শুনেছি? ফারুকের গলায় শোনা, কখনও ভুলিনি।
ফারুক হচ্ছেন কবীর সুমনের বন্ধু, পুরো নাম আবদুল্লা ফারুক। তিনি কবীর সুমনের সহকর্মী ছিলেন তিনি যখন ভয়েস অব আমেরিকায় সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতেন। আবদুল্লাহ্ আল ফারুক ছিলেন ‘সাংবাদিক, বেতার-ঘোষক-ও-পাঠক-ও-আলোচক’ এভাবেই তার পরিচয় তুলে ধরেছেন কবীর সুমন।
আবদুল্লাহ্ আল ফারুকের গলার সুরও ছিল অসাধারণ। গুনগুন করে গাওয়া সেই অসাধারণ গলায় শোনা গানটি কবীর সুমনকে আকৃষ্ট করে। আর তা তিনি সারা জীবন ভুলেননি।
আবদুল্লাহ্ আল ফারুকের বাড়ি পশ্চিম বঙ্গে হলেও তিনি আর জার্মান ও আমেরিকায় কাজের সূত্রে শেষ পর্যন্ত জার্মানেই স্থায়ী বসতি পাতেন।
আর কবীর সুমন আধুনিক বাংলা গানের ব্যতিক্রম ধরনের গান গেয়ে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করলেও তার অন্যসব পরিচয়ও যথেষ্ট মূল্যবান। তার সাংবাদিক পরিচয় আগেই বলা হয়েছে। এর বাইরে তিনি লেখক, চলচ্চিত্রকার, গীতিকার ও গল্পকার। শেষে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সাংসদ নির্বাচিত হন।
মলয় ঘোষ দস্তিদারও চট্টগ্রামের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। ঊনিশ ত্রিশ এর দশকে চট্টগ্রামে যুব বিদ্রোহের বিপ্লবী। যদিও তার মূল পরিচয় গীতিকার, সুরকার, বিশেষ করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের পথিকৃৎ শিল্পী। চারণ কবি হিসাবেও তিনি সুপরিচিত। অন্যদিকে মাস্টার দা সূর্য সেনের শিষ্য। ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী গায়ক অগ্নি যুগে অগ্নি রোষে পড়ে গানের জন্য ১৯৫২ সালে তিনি কারাবরণ করেন।
তার জন্ম ১৯২০ সালের ১৩ জুন, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ায়। মারা যান ১৯৮২ সালের ১২ মার্চ। সুমন লিখেছেন মলয় ঘোষ দস্তিদার চট্টগ্রাম বেতারের স্টাফ আর্টিস্ট ছিলেন। মলয় ঘোষের সেই পরিচয় যথেষ্ট নয়। ১৯৪১ সালে তিনি বেতারে প্রথম গান পরিবেশন করেন। পরবর্তীতে কলকাতায় গিয়ে মিনার্ভ থিয়েটারে চাকরি করেন। একইসময়ে কলকাতার কলম্বিয়া গ্রামোফোন কোম্পানি তার রচিত ও সুরাপিত প্রথম গানের রেকর্ড বের করে। ‘ছোড ছোড ডেউ তুলি’ যেমন তার অমর গান তেমনি ‘আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান,’ ‘বাহার মারি সাম্পান যার,’ চট্টগ্রামে অমর হয়ে আছে। যে সব গানের মৃত্যু হবে না চট্টগ্রামে।
অবশ্য কবির সুমন শুধু আবদুল্লাহ্ আল ফারুকের কণ্ঠে গান শুনেই শেষ করেননি শেষ পর্যন্ত তিনি সাবিনা ইয়াসমিনকে সঙ্গে নিয়ে দুজনে গানটি গেয়েছেন। গানটি ইউটিউবে সার্চ দিলে পাওয়া যায়। যা অনন্য এক আনন্দ তৈরি করবে চট্টগ্রামের শ্রোতাদের কাছে।
Discussion about this post