চট্টগ্রাম, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩:
অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চালু হবে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি চালু হলে মুরাদপুর থেকে পতেঙ্গা সৈকত বা কর্ণফুলী টানেল রোড পর্যন্ত যেতে পারবে যানবাহন। মূলত বিমান বন্দর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সাথে সাথে যোগাযোগ সহজ করতে এই এক্সেপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম নগরে আসতে যানজটে ব্যাপক সময় অপচয় হয় যাতায়াতকারীদের। অন্যদিকে বিমান বন্দর থেকে বিদেশি পর্যটকদের শহরে প্রবেশ করতেও যানজটের কবলে পড়তে হত। এতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও বন্দরের কার্যক্রমের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছিল।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম নগরে প্রবেশ করতে ২০ মিনিট লাগবে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়নকর্তৃপক্ষ জানায়। আগে যেখানে সময় লাগত ১ ঘণ্টা বা কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি।
যেকারণে পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে চালু হলে চট্টগ্রাম নগরের যোগাযোগ ব্যব¯’ায় অভ’তপূর্ব উন্নতি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী সহ সকল উদ্যোক্তারা। এই এক্সপ্রেস ওয়ের কারণে চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন।
পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিমি. দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে লালাখান বাজারে এসে যুক্ত হবে নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের সঙ্গে। যেটি বহদ্দার হাট থেকে আবার চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে যুক্ত হয়েছে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন আসবে।
অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়েটি পতেঙ্গার অংশে বিমানবন্দর ছাড়া কর্ণফুলি নদীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেলের সাথে যুক্ত হবে। যাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেলের গুরুত্ব আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।
অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড। যেটি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, এবছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে বিমানবন্দর সড়কসহ নগরীর সব সড়কে বাড়বে যানবাহনের চাপ। আর তা সামাল দিতে এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ২৪ টি র্যাম্প থাকবে। গাড়ি ওঠানামার পথ অর্থাৎ ৯টি জংশনে ২৪টি র্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাসে ৪টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে ২টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, কাস্টম মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ৪টি, কেইপিজেডে ২টি, কাঠগড়ে ২টি ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি র্যাম্প থাকছে। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রশস্ততা হবে ৫৪ ফুট।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জজিরুল আলম দোভাষ বলেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলতি বছরের নভেম্বরে চালু হবে । এরই মধ্যে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৬ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের এই প্রকল্পের ৭ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং সহ ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে ২০ মিনিটের মধ্যে লালখান বাজার থেকে ভোগান্তি ছাড়াই বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মোট নির্মাণ ব্যয় ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা। যৌথভাবে নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র্যাঙ্কিন।
সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম দোভাষ জানিয়েছেন নভেম্বরে উদ্বোধন হবে চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন এই এক্সপ্রেসওয়ে।
Discussion about this post